Friday 31 December 2010

কংগ্রেস প্রকাশিত বইয়ের তথ্য : বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোই দায়ী

সফিকুল ইসলাম, কলকাতা

কংগ্রেসের ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকা ‘কংগ্রেস অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ দ্য ইন্ডিয়ান নেশনস’-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সেই সময়কার কার্যকলাপের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকেই দায়ী করা হয়েছে, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের ভূমিকাকে লঘু করে দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্পাদনা করা বইয়ে লেখা হয়েছে ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার ডাক এবং সেস্থানে রামমন্দির করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানীর রাম রথযাত্রায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে এক সমাবেশে উত্তর প্রদেশের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং প্রথম উত্তেজক ভাষণ দেন। এরপর এলকে আদভানী, উমা ভারতী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে এমন উত্তেজনা ছড়ায় যে, ‘করসেবক’ নামধারী উগ্র হিন্দুরা শাবল, গাইতি ইত্যাদি নিয়ে মসজিদের মিনারসহ অন্যান্য স্থানে উঠে পড়ে এবং মসজিদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বইয়ে লেখা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল, মসজিদ সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সে দায়িত্ব পালনের কথা দিলেও তিনি তা পালন করেননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে এবং প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর দেশের সব সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বলে পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুস্তিকাটিতে রাজীব গান্ধীর প্রশংসা করা হলেও তার ভাই সঞ্জয় গান্ধীর নিন্দা করা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থার মূল্যায়ন করতে গিয়ে স্বীকার করা হয়েছে, ওই সময়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ তো বটেই বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছিল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করেছিলেন বললেও সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীই। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বস্তি উচ্ছেদ তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কথাই খোলাখুলি স্বীকার করেছে কংগ্রেস। আত্মসমীক্ষার ওই বইয়ে বোঝানো হয়েছে ক্ষমতার উত্স ছিলেন সঞ্জয়ই। কংগ্রেসের এই মূল্যায়নে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। তাদের বক্তব্য, নিজেদের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন প্রণব মুখার্জিরা।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধী ও পুত্র বরুণ এখন বিজেপির সংসদ সদস্য। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সঞ্জয়কে এবং বাবরি মসজিদ ইস্যুতে নেতাদের ভূমিকা কি আড়াল করতে চাইছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন কংগ্রেসের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

No comments:

Post a Comment