Monday 19 December 2011
বিএসএফের গুলিতে ৪ বাংলাদেশি নিহত
কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আজ শনিবার ও গতকাল শুক্রবার চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম: জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়ক মণ্ডল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আজ শনিবার ভোরে আলমগীর ইসলাম (২৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বর হোসেন মুসা জানান, আলমগীর কৃষ্ণানন্দ বকশী গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিন সহযোগীসহ গরু নিয়ে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
শিমুলবাড়ী বিজিবি বিওপির কমান্ডার সুবেদার নিজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরপুর: জেলার মেহেরপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গতকাল শুক্রবার রাতে নাহারুল হোসেন (৩৫) নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাওড়াতলা গ্রামে।
নিহতের বাবা বিশারদ হোসেন জানান, গতকাল রাত আটটার দিকে নাহারুল সেচকাজ করতে জমিতে যান। এর কিছুক্ষণ পরই সীমান্তে গুলির শব্দ শুনে তিনি সেখানে যান। কিন্তু ততক্ষণে বিএসএফ লাশ ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যায়।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিএসএফের গুলিতে একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির ৩২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও মিরপুর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল হামিদুন নবী চৌধুরী বলেন, শাওড়াতলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশি মারা গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিএসএফ কেন এ ঘটনা ঘটাল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা শুনে বিজিবি লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বিএসএফ দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছে বিকেলে চিঠি দিয়ে জানানো হবে কখন তাঁদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
নিহত দুজন হলেন, কাটলা সীমান্তের দাউদপুর গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান (২০) এবং রণগ্রামের মো. তাইজুল ইসলাম (২৬)।
আজ শনিবার দুপুরে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরে বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের আগ্রা ক্যাম্পের কমান্ডার রাকেশ কুমার বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এরপরে বিএসএফ তাঁদেরকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি ছোড়ে। এতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভাইগড় ক্যাম্পের কমান্ডার আবদুল কাদের বীর বলেন, এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-12-18
Wednesday 23 November 2011
বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : দৌলতপুরে কৃষককে অপহরণ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার ছাড়া হত্যার দায়মুক্তিকে উত্সাহী করবে : বিএসএফের হত্যায় বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে
অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫ নাগরিক, ৮ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনির শিকার হয়ে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বিএসএফ আরও ৩ বাংলাদেশীকে আহত করেছে এবং ৬ বাংলাদেশীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অক্টোবর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই হচ্ছে কন্যাশিশু। বাকি ১২ জন হলেন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। ৩৫ কন্যাশিশুর মধ্যে আবার ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ধর্ষণের কারণে আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
যদিও ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী তোলপাড় করেছিল। এখন প্রতিনিয়ত ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব।
অধিকারের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে সাতক্ষীরায় তাদের একজন নারী মানবাধিকার কর্মী বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে পেট্রোবাংলাকে বিশিষ্ট ৩ নাগরিকের চিঠির জবাব ২৯ দিনেও পাওয়া যায়নি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ৩ নাগরিক এ চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির জবাব না দেয়ায় অধিকার মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক, দুইজন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলাম। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়’ বক্তব্যটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তিকেই উত্সাহিত করছে বলে অধিকার মনে করে। বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় নিন্দা জ্ঞাপন করছে। অধিকার মনে করে, বিএসএফের এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব এবং বিজিবির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়েও অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
Monday 31 October 2011
অধিকার-এর সরেজমিন প্রতিবেদন : রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে বিএসএফ
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যার শিকার রফিকুলের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে এ মন্তব্য করেছে। অধিকার সরেজমিন তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে বলছে, বিএসএফ নিরস্ত্র বাংলাদেশী রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে অধিকার সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে দাবি জানায়। নিহত রফিকুলের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার উফারমারা গ্রামে। তার স্ত্রীর নাম মোছাম্মত মিনি বেগম। রিয়াদ হোসেন (৮) ও রিফাত হোসেন (৬) নামে তার দুটি সন্তান রয়েছে। রফিকুল কৃষিকাজের পাশাপাশি বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন।
অধিকার সরেজমিনে গিয়ে নিহতের স্ত্রী মোছাম্মত মিনি বেগম (২৮), ভাই নজরুল ইসলাম (৪৫), চাচাতো ভাই আবেদার রহমান (৪৫), ৮নং বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের আনসার ভিডিপি কমান্ডার এনামুল হক, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ, ময়না তদন্তকারী লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস, হাসপাতালের মর্গ-সহকারী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ধবলসুতী বিওপি, পাটগ্রামের নায়েব সুবেদার মেজবাহ এবং রফিকুলের লাশের গোসলদানকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
বিএসএফ সদস্য কর্তৃক পাথর ছুড়ে রফিকুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে পাটগ্রামে সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে অধিকার জানতে পারে, চলতি বছর ২৪ জুলাই ভোর ৫টায় ভারত থেকে গরু নিয়ে সানিয়াজান নদী পার হওয়ার সময়ে ওই নদীর ভারতীয় অংশে নির্মিত ব্রিজের ওপর থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। পরে ব্রিজের ওপর তুলে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিএসএফের ছোড়া পাথরে দুটি গরুও মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনের বরাত দিয়ে অধিকার জানিয়েছে, বিএসএফ শুধু তাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, তার লাশ গুম করার লক্ষ্যে নদীতে বাঁশ পুঁতে তাতে বেঁধে রাখে। পরে খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এছাড়া পাথরের আঘাতে তার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল।
রফিকুলের স্ত্রীর বক্তব্য : মোছাম্মত মিনি বেগম অধিকারকে জানান, তার স্বামী একজন ভূমিহীন কৃষক। দুই সন্তান নিয়ে তার অভাবের সংসার। রফিকুল কৃষিকাজের অবসরে সীমান্তের বুড়িমারীর জিরো পয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন। চলতি বছর ২৩ জুলাই ৫টায় তার স্বামী বাজার করতে বুড়িমারীবাজারে যান। রফিকুল রাতে আর বাসায় না ফেরায় তিনি তার চাচাতো ভাশুর মো. আবেদার রহমানকে বিষয়টি জানান। আবেদার রহমান তাকে বলেন, রফিকুল গরু আনতে যেতে পারে। ২৪ জুলাই ভোরে তিনি মোবাইল ফোনে রফিকুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবারও আবেদার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবেদার রহমান তাকে জানান, ভোরের দিকে তিনি বুড়িমারী বাজারে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছেন, রাতে অনেকেই ভারত থেকে গরু নিয়ে ফিরলেও রফিকুল ফেরেনি। এছাড়া বাজারে অনেককেই বলাবলি করতে শোনেন, বিএসএফ সদস্যরা রাতে নদী পারাপারকারীদের পাথর ছুড়ে আঘাত করেছে। রফিকুলকেও পাথর ছোড়া হয়েছিল বলে বাজারের অনেকেই আলোচনা করছিলেন।
তারপর আবেদার রহমান রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তের বামনদল গ্রামে সানিয়াজান নদীর তীরে যান এবং নদী থেকে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি আনেন। লাশ বাড়ি আনার পরে পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা লাশ নিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ২৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায় লাশ বাসায় নিয়ে আসার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কপালে একটি ক্ষত ছিল, মাথার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল, নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
এসআই, পাটগ্রাম থানা : এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই দুপুর সোয়া ২টায় উফরমারা গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় আসেন এবং বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নম্বর-২১, তারিখ-২৪.৭.২০১১; ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি)। তিনি নিজেই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি বিকাল ৩টায় রফিকুলের বাড়ি যান এবং লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠায়। ২৫ জুলাই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে রফিকুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস : লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা রফিকুল নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতালে আনেন। তিনি জানতে পারেন, বিএসএফ সদস্যদের পাথরের আঘাতে রফিকুল মারা গেছেন। ২৫ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০টায় ডা. মোতাছিব, ডা. মেহেদী মাসুম ও তাকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, পাথর বা শক্ত কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করায় করোটির হার ফেটে গিয়েছিল, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই রফিকুলের মৃত্যু হয়েছে।
Saturday 1 October 2011
ফুলবাড়ী সীমান্ত থেকে ২ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
বিজিবি ও দুই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী বিদ্যাবাগিশ ঠোস গ্রামের কৃষক মোজাহার আলীর ছেলে মজিদুল ইসলাম ও নজির হোসেনের ছেলে হুজুর আলী নামের দুই যুবক বুধবার তাদের বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় নগরকুরষা সীমান্তের আত্মীয় জয়নাল পাগলার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায়। জয়নাল পাগলা আটককৃত যুবক হুজুর আলীর আপন চাচা। ওই বাড়িতে বিকাল ৪টায় তারা ভাত খেতে বসে। কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার কুরষাহাট
ক্যাম্পের বিএসএফ তাদের ভাত খাওয়া অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়। বিএসএফ সদস্যরা দুই যুবককে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশী দুই যুবককে ফেরত আনার ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবির ফুলবাড়ী গঙ্গারহাট বিওপির নায়েব সুবেদার নিশিকান্ত ও হাবিলদার আইয়ুব আলী জানান, তারা দুই যুবককে ফেরত পেতে পদক্ষেপ নেয়ার আগেই বিএসএফ তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তবে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে তারা বিএসএফকে পত্র দেবেন।
Saturday 24 September 2011
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকারের কেসস্টাডি : কারণ ছাড়াই বিএসএফ গুলি করে মেরেছে সিলেটের আশরাফুলকে
সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষী (বিএসএফ) গুলি চালিয়ে নিরপরাধ বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে অধিকার’র অনুসন্ধানে। সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিডর ধলাই নদী এলাকায় পাথরের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে প্রাণ হারায় আশরাফুল। আশরাফুলকে নির্দয়ভাবে হত্যা করার ঘটনাটি বেসরকারি সংস্থা অধিকার কেসস্টাডি হিসেবে গ্রহণ করে অনুসন্ধান চালায়।
অধিকারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই রাত ৯টায় একই উপজেলার বাঘারপাড় গ্রামের মো. আবদুুল আহাদ ও লালবানুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২০), একই গ্রামের মৃত কনু মিয়া ও হাওয়াতুন নেছার ছেলে সোনা মিয়া (১৯) এবং পারুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের আফতাব আলী ও আমিরুন নেছার ছেলে এলাইছ মিয়া (২২) পাথর আনতে সীমান্ত এলাকায় ধলাই নদীর বাংলাদেশ অংশে কালিডর পাথর কোয়ারিতে যায়। ভারতের শিলং অঞ্চলের ভোলাগঞ্জ থানার কালিডর ক্যাম্পের ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আশরাফুল ও এলাইছ গুলিবিদ্ধ হয়। আশরাফুল ও এলাইছের পরিবার গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আশরাফুল মারা যায় এবং এলাইছ মিয়াকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেখানে ৮ দিন চিকিত্সার পর বাড়িতে আনা হয়।
আবদুুল আহাদ অধিকার-কে জানান, তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম তাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করত। ঘটনার কয়েক দিন আগে পশ্চিম ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্ট’-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আশরাফুল খেলোয়াড়দের পুরস্কার দিতে চেয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফুল তার বন্ধু এলাইছ মিয়া ও সোনামিয়াকে নিয়ে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ ও বিক্রি করে পুরস্কার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনামতো ১ জুলাই আনুমানিক রাত ৮টায় আশরাফুল দু’বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়। রাত ৯টায় নৌকাযোগে ধলাই নদীর কালিডর পাথর কোয়ারিতে পৌঁছে। সেখানে আরও প্রায় এক-দেড়শ’ শ্রমিক পাথর তোলার জন্য গিয়েছিল। রাত আনুমানিক ৯টা ৫ মিনিটে সোনামিয়া আশরাফুলের বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায়, তার ছেলে ও এলাইছ পাথর তোলার জন্য নদীতে গেলে ভারতের বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। বিএসএফ’র ছোড়া গুলি বাংলাদেশের ২শ’ গজ ভেতরে থাকা আশরাফুল ও এলাইছের শরীরে বিদ্ধ হয়। সোনামিয়া মোবাইল ফোনে তাকে আরও জানায়, গুলিবিদ্ধ দুজনকে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত আনুমানিক ১০টায় সোনামিয়া কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের উন্নত চিকিত্সার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
রাত সাড়ে ১১টায় চিকিত্সক আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আবদুুল আহাদ আরও জানান, পরদিন, ২ জুলাই আশরাফুলের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে রওনা দিয়ে বাসায় পৌঁছে রাত সাড়ে ৯টায়। এর পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি আরও জানান, আশরাফুলের মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত ৩৩টি ছররা গুলি লেগেছিল বলে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের কাছ থেকে জেনেছেন। তার অপর ছেলে নজরুল ইসলাম ২ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এলাইছ মিয়া অধিকার-কে জানায়, ১ জুলাই সে তার বন্ধু আশরাফুল ও সোনামিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পাথর তোলার জন্য নৌকায় করে সীমান্ত এলাকার কালিডরে যান। সেখানে তখন প্রায় এক-দেড়শ’ শ্রমিক পাথর তুলছিল। এ সময় রাতের অন্ধকারে ভারত সীমান্ত থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের কেউ পানিতেই বসে পড়ে আবার অনেকে ডাঙায় শুয়ে পড়ে। বিএসএফ সদস্যদের গুলি এসে তার এবং আশরাফুলের শরীরে লাগে। সে জানায়, সেগুলো ছররা গুলি হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে তা বিদ্ধ হয়। গুলি ছোড়া বন্ধ করে বিএসএফ সদস্যরা চলে গেলে উপস্থিত শ্রমিকদের সহায়তায় সোনামিয়া তাকে ও আশরাফুলকে চিকিত্সার জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দুজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং সে নিজে ওই হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৪নম্বর ওয়ার্ডে ৮দিন চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তার শরীরে ২৫-২৬টি ছররা গুলি লেগেছিল। সে শুনেছে, আশরাফুলের মাথায় ও বুকের নিচে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোনামিয়া অধিকার-কে বলে, আশরাফুল ও এলাইছের সঙ্গে ১ জুলাই পাথর তোলার জন্য কালিডর এলাকায় যায়। তারা বাংলাদেশের ২শ’ গজ ভেতরে পাথর তোলার জন্য গেলে রাতের অন্ধকারে বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। এতে আশরাফুল ও এলাইছ গুলিবিদ্ধ হয়। সে তখন মোবাইল ফোনে এলাইছ এবং আশরাফুলের বাড়িতে তাদের আহত হওয়ার খবর জানায়। সে ও শ্রমিকরা গুলিবিদ্ধ দুজনকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। তখন সে তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্ত ডা. আবদুুল্লাহ অধিকার-কে বলেন, কয়েকজন লোক ১ জুলাই রাত ১০টায় কালিডর থেকে গুলিবিদ্ধ আশরাফুল ও এলাইছ মিয়া নামে দুজনকে নিয়ে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। তিনি দুজনকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নিতে বলেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ পরির্দশক কামাল আহমদ অধিকার-কে বলেন, ২ জুলাই রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে বাঘারপাড় গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় এসে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে নজরুল ইসলাম উল্লেখ করে, তার ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম ১ জুলাই বন্ধু এলাইছ মিয়া ও সোনামিয়াকে নিয়ে পাথর আনতে সীমান্ত এলাকার ধলাই নদীর বাংলাদেশ অংশে কালিডর পাথর কোয়ারিতে যায়। অজ্ঞাতনামা বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তার ভাই আশরাফুল মারা যায়।
পুলিশ পরিদর্শক কামাল আহমদ এর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের কিছু অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা পাথর তুলতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বেআইনিভাবে গুলি ছোড়ে। এতে প্রায়ই মানুষ মারা যায়। এসব বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও জানেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র সুবেদার চান মিয়া অধিকার-কে বলেন, ১ জুলাই এ ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে অপারগ। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সহকারী মাসুক আহমদ অধিকার-কে বলেন, ১ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টা ৪৫মিনিটে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে আনেন। ২ জুলাই দুপুরের দিকে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। লাশের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লেগেছিল। তাছাড়া লাশের শরীর থেকে বেশ কিছু গুলি বের করে পুলিশকে আলামত হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়। আশরাফুলের লাশের গোসলদানকারী আবদুুল বারী অধিকার-কে বলেন, তিনি আজিজুল হক ও আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আশরাফুলের লাশের গোসল দিয়েছেন। লাশের মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত অনেক ছররা গুলির চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান। এছাড়া প্রচুর রক্তক্ষরণেরও চিহ্ন ছিল।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকার’র মন্তব্যে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা অবিরত ঘটেই চলেছে। গত ১২ মার্চ ভারতের নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বিএসএফ’র মধ্যে ৫দিনের বৈঠকের শেষ দিনে বিএসএফ’র মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তব জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত আর প্রাণঘাতী অস্ত্র চালাবে না; তবুও সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে ভারত নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা করছে
।
ভারতে দলিতদের চেয়ে মুসলমানদের অবস্থা খারাপ
নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের এক তারবার্তা প্রকাশ করে এমন খবর দিয়েছে সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ইউএস ভিউজ অন ইন্ডিয়ান ইসলাম অ্যান্ড ইটস ইন্টারপ্রেটেশন’ শিরোনামে দিল্লি থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো ওই তারবার্তাটি প্রকাশ করেছে উইকিলিকস।
এছাড়া তারবার্তাটিতে ভারতীয় মুসলমানদের শিয়া-সুন্নির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেরেলভি ও দেওবন্দির গ্রুপের মতো পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতে অন্তত ১৮ কোটি মুসলমান রয়েছে, যা ভারতের আদমশুমারিতে অনেক কম দেখানো হয়েছে। ভারতীয় অনেক সূত্রের বরাত দিয়ে তারবার্তাটিতে বলা হয়েছে, সরকারি হিসাব (আদমশুমারি ২০০১) অনুযায়ী ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ১৩ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু আমেরিকা মনে করে, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের মতে, সংখ্যাটি ১৬ থেকে ১৮ কোটি।
তারবার্তায় ভারতীয় মুসলমানদের উদারপন্থি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছে, আজিম প্রেমজির মতো কোটিপতি থাকলেও ভারতে বেশিরভাগ মুসলমানের অবস্থা খুবই খারাপ। তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, কোটিপতি মুসলিম ভারতীয়রা দেশটির অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানের মতো আইকনদের অসংখ্য ভক্ত রয়েছে ভারতে। তবে সেখানকার মুসলমানরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তারবার্তায় বলা হয়, ভারতের পার্লামেন্ট বা অন্যান্য নির্বাচনী বডিতে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
Tuesday 16 August 2011
সিলেট সীমান্তে বিএসএফ ও খাসিয়াদের গুলিতে নিহত ২
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সফরকালে ওয়াদা করেছিলেন সীমান্তে আর কোনো বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করা হবে না। তার এ প্রতিশ্রুতির মাত্র ১১ দিনের মাথায় গুলি করে বাংলাদেশী জোড়া খুন করল ভারত। এর আগে গত ২৩ জুলাই
ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশ সফরের দিনও সীমান্তে বাংলাদেশী খুন করেছিল ভারত।
সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে গতকাল নিহতরা হলেন, বিছনাকান্দি গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে কামাল উদ্দিন জহুর (৩২) ও ইরফান আলীর ছেলে কামাল আহমদ (৩০)। আহত হয়েছেন একই গ্রামের সারং উদ্দিনের ছেলে ইমাম উদ্দিন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকারে করে বলেছেন, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা লাশ দুটি উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসন লাশ সিলেটে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে চাইলে আত্মীয় ও এলাকাবাসী আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে আসা এক শ্রমিক জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির বগাইয়া নদীতে ১২৬৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাথর উত্তোলন করতে যায় তিন শ্রমিক। এ সময় বিএসএফ ও ভারতীয় খাসিয়ারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই দু’জন বাংলাদেশী শ্রমিক মারা যায়। একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পালিয়ে আসা আহত শ্রমিক গ্রামবাসীদের ঘটনা জানালে লাশের সন্ধানে গ্রামের মানুষ ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশের সন্ধান করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোর ৬টায় একজন এবং সকাল ৯টায় আরও একজনের লাশের সন্ধান পান তারা। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিলেট সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আজম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ধ্যার পর কোয়ারি এলাকায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও এসব শ্রমিক রাতের আঁধারে সেখানে গিয়েছিল। তিনি জানান, বিজিবি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বিএসএফ’র সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গত সন্ধ্যায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি ইউনুছ মিয়া জানান, ভোর সাড়ে ৪টায় ১২৬৩ সীমানা পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোয়ারি এলাকার বগাই নদীতে নৌকাযোগে পাথর উত্তোলন করতে যান কয়েকজন বাংলাদেশী। এ সময় ভারতীয়রা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওসি আরও জানান, আত্মীয় ও এলাকাবাসীর দাবির কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিকাল ৫টায় বিছনাকান্দি জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সিলেট ৪-আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, বিএসএফ’র গুলিতে পাথর শ্রমিক নিহত হওয়া আবারও ভারত জাতীয় বেইমানির পরিচয় দিল। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন সীমান্তের লোকজনের ওপর আর কোনো গুলি চালাবে না ভারত, এতে প্রমাণ হয় ভারত তার দৃষ্টিভঙ্গি বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করেনি।
এ ব্যাপারে গেয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, তিনি ঘটনার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ঘটনার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি, নিহতের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য আবেদন জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফনের সুযোগ দিয়েছি।
ইলিয়াস আলীর প্রতিবাদ : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনিপর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী এক বিবৃতিতে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে দু’জন নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একের পর এক হামলা চালিয়ে নিরীহ বাংলাদেশীদের অব্যাহতভাবে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। ভারতের সেবাদাস এ সরকার এসব হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হামলা এবং জমি দখলের প্রচেষ্টার ন্যূনতম কোনো প্রতিবাদ করছে না। সীমান্তে যৌথ জরিপের নামে একতরফাভাবে বাংলাদেশের জনগণের বসতভিটা ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত করছে। এরই মধ্যে সরকার পাদুয়া, বিবির হাওড় ও বিছনাকান্দিসহ সীমান্তে একতরফা জরিপ করে যাচ্ছে। সরকার ভারতীয়দের নীল নকশানুযায়ী সীমান্তে জরিপ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁবেদার শেখ হাসিনা সরকার একদিকে বাংলাদেশের ভূমি প্রহসনের জরিপের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে। অপরদিকে ভারতীয়রা সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি সীমান্ত আজ অরক্ষিত। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে।
Friday 5 August 2011
সৌদি আরব থেকে ফেরত আসছে ১০ লাখ বাংলাদেশী : বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ভারতের
সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্ধেক প্রবাসী বাংলাদেশীই এখন অবৈধ। কারণ গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের ওয়ার্কপারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় বছর আগে সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি সৌদি আরব সফর করে এ বিষয়ে তেমন কোনো উলেল্গখযোগ্য সাড়া পাননি বলে জানা গেছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে যান বলেও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রুমি সাঈদ জানান।
জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় সৌদি আরবের ছোট-বড় বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশীরা বেকার হয়ে পড়ে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠে এবং বহু নতুন কোম্পানি চালু হয়। বেকার এসব বাংলাদেশী ওইসব কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় আকামা পরিবর্তন নিয়ে।
সৌদি সরকার গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন পুরোপুরি বন্ধ রাখায় নতুন নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব বাংলাদেশীকে বৈধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু সৌদি স্পন্সর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বহু বাংলাদেশী প্রবাসীকে সৌদি আরবে আকামা দেয়। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাগজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নবায়ন বন্ধ করে দেয়। যার ফলে তাদের অধীনে আসা বাংলাদেশীরা পড়ে বিপাকে।
কথা হয় আভায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক হাসান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু তার আকামা পরিবর্তন হয়নি। কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। কিন্তু আকামা না হওয়ায় তার দেশে ফেরা বা এখানে থাকা দুটিই অনিশ্চিত। যে কোনো মুহূর্তে সৌদি পুলিশ অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
রিয়াদের একটি শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী নাগরিক কবির হোসেন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবের বিভিন্ন কেম্প্পানিতে নিয়োজিত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী এখন অবৈধ। আকামা বদল না হওয়ায় এদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। অথচ এদের অনেকেরই এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে আসার খরচই ওঠেনি। এদের অধিকাংশই গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাগ্য বদলের আশায় এখানে এসেছিলেন।
মদিনায় গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ মদিনা শাখার সভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা আমাদের এ চরম ভোগান্তির কারণ। তিনি জানান, তার মতো আরও লাখ লাখ বাংলাদেশী চরম অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যে এখানে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদেশিদের জন্য সৌদি আরবে আকামার মেয়াদ থাকে ৩ থেকে ৫ বছর। এর মধ্যেই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অন্য সব দেশের জন্যই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের দরজা খোলা রয়েছে। ওইসব দেশের নাগরিকদের কোনো ভোগান্তিও নেই। কিন্তু ২০০৭ সালে হঠাত্ করেই বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর আশ্বাস পাওয়া গেছে চালুর। কিন্তু চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে তা আর হচ্ছে না।
বর্তমানে জেদ্দায় অবস্থানরত গেল্গাবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম অভিযোগ করেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশের ভাব-মর্যাদা উন্নয়নে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার। তিনি আরও জানান, সৌদি আরবে ভারতের একটি নিজস্ব পত্রিকা রয়েছে। তাছাড়া ভারতের প্রায় সবক’টি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সৌদি আরবের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অতি সহজেই ভারত তাদের নিজেদের ইমেজ তৈরি এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার দখল করা। আর এতে বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয় শ্রমিকরা।
Saturday 9 July 2011
ফরেন পলিসি' ম্যাগাজিনের রিপোর্ট ভারত-দুর্গের জন্য বাংলাদেশ ঘিরে দিল্লীর বার্লিন প্রাচীর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি তাদের ২০১১ এর জুলাই-আগস্ট সংখ্যায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নির্বিচারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের ওপরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্কট কার্নি, জ্যাসন মিকলেইন ও ক্রিসটেইন হোলসারের সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ফেলানী হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে তুলে ধরা হয়েছে গত এক দশকের সীমান্ত হত্যার লোমহর্ষক নানা কাহিনী।
ম্যাগাজিনের ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে সীমান্তে বেড়া নির্মাণকে ভারতীয়রা তাদের জন্য একটি সর্বরোগ হরণকারী প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের বিবেচনায় এই বেড়া নির্মাণের ফলে মুসলিম জঙ্গিবাদ ও কাজের সন্ধানে বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশকারী বিদেশীদের আটকানো সহজ হবে। কিন্তু তার পরেও সীমান্তে যেভাবে হত্যাকান্ড চলছে তা বিশ্ব বিবেকের দরজায় আজ কড়া নাড়ছে।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভারতের এই নির্বিচার হত্যাকান্ড বন্ধ করতে ভারতের উচ্চ পর্যায়ে বার বার আবেদন নিবেদন জানানোর পরেও কিন্তু এই হত্যাকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। তবে তারা অনেক সময়েই আমাদেরকে এই বলে ওয়াদা দিয়েছে ও আশ্বস্ত করেছে যে তারা আর কোন হত্যাকান্ড ঘটাবে না কিংবা সীমান্তে তারা কোন ভারী অস্ত্রও আর ব্যবহার করবে না। কিন্তু কখনোই তারা বাস্তবে তাদের সেই কথা কিন্তু রাখেনি।
উপরন্তু ভারতের কর্তা ব্যক্তিরা বাংলাদেশীদের বিভিন্নভাবে অপরাধী সাজিয়ে এই হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে। এদিকে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম' এর প্রধান কর্মকর্তা কিরিটি রায় বলেছেন সাধারণত সীমান্তের লাইন ম্যানের সাথে অর্থ লেনদেন ছাড়া কেউই বেড়া পারাপারের জন্য ঝুঁকি নেন না। তারা বিএসএফকে ঘুষ দিয়ে অন্যমনস্ক করে অবৈধ অভিভাসীদের সীমান্ত পারাপারে সহায়তার এই কাজটি করে থাকে। ভারতের এই মানবাধিকার সংগঠনটি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অধিকার ও হিউম্যান রাইটস এর সাথে যৌথ উদ্যোগে সীমান্ত হত্যাকান্ড ও সমসাময়িক বিষয়ে একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। ঐ প্রতিবেদনে মাসুম এর প্রধান কিরিটি বলেন, সীমান্তে ঘুষ প্রথার কারণেই সেখানে এই হত্যাকান্ড বেশি ঘটে। ঘুষ না দিয়ে যদি কেউ সীমান্ত পার হতে চেষ্টা করে তাহলে লাইনম্যানরা বিষয়টি অস্ত্রধারী বিএসএফকে জানিয়ে দেয় এবং গুলী চালাতে উৎসাহিত করে।
সীমান্তে এই হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্য ভারতীয়রা বরাবরই নানা যুক্তি তুলে ধরে আসছে। তারা অনেক সময় বলে বেড়ায় নেহায়েত আত্মরক্ষার জন্যই সীমান্তরক্ষীরা গুলী চালাতে বাধ্য হয়। নচেৎ তারা কখনো গুলী করে না। তবে ভারতীয় এই কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য যে কতটা মিথ্যাচার আর সত্যের অপলাপ তার প্রমাণও পাওয়া যায় মাসুম অধিকার ও হিউম্যান রাটস'র পরিচালিত জরিপের ঐ গবেষণা প্রতিবেদনে। তিনটি সংস্থার যৌথভাবে পরিচালিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত এক দশকে সীমান্তে নিহত হয়েছে এমন একজনেরও পরিচয় পাওয়া যায়নি যিনি সীমান্ত পার হতে গিয়ে কোন অস্ত্র বহন করেছেন। প্রতিবেদনে এই তথ্যটিই এসেছে যে বড়জোর তার হাতে হয়তো একটি লাঠি বা কাস্তে ছিল। সংগঠন তিনটি সীমান্তে নিরীহ মানুষের ওপরে বিএসএফ'র বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।