Monday 19 December 2011

বিএসএফের গুলিতে ৪ বাংলাদেশি নিহত

অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ১৭-১২-২০১১
কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আজ শনিবার ও গতকাল শুক্রবার চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম: জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়ক মণ্ডল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আজ শনিবার ভোরে আলমগীর ইসলাম (২৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বর হোসেন মুসা জানান, আলমগীর কৃষ্ণানন্দ বকশী গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিন সহযোগীসহ গরু নিয়ে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
শিমুলবাড়ী বিজিবি বিওপির কমান্ডার সুবেদার নিজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরপুর: জেলার মেহেরপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গতকাল শুক্রবার রাতে নাহারুল হোসেন (৩৫) নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাওড়াতলা গ্রামে।
নিহতের বাবা বিশারদ হোসেন জানান, গতকাল রাত আটটার দিকে নাহারুল সেচকাজ করতে জমিতে যান। এর কিছুক্ষণ পরই সীমান্তে গুলির শব্দ শুনে তিনি সেখানে যান। কিন্তু ততক্ষণে বিএসএফ লাশ ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যায়।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিএসএফের গুলিতে একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির ৩২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও মিরপুর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল হামিদুন নবী চৌধুরী বলেন, শাওড়াতলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশি মারা গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিএসএফ কেন এ ঘটনা ঘটাল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা শুনে বিজিবি লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বিএসএফ দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছে বিকেলে চিঠি দিয়ে জানানো হবে কখন তাঁদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
নিহত দুজন হলেন, কাটলা সীমান্তের দাউদপুর গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান (২০) এবং রণগ্রামের মো. তাইজুল ইসলাম (২৬)।
আজ শনিবার দুপুরে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরে বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের আগ্রা ক্যাম্পের কমান্ডার রাকেশ কুমার বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এরপরে বিএসএফ তাঁদেরকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি ছোড়ে। এতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভাইগড় ক্যাম্পের কমান্ডার আবদুল কাদের বীর বলেন, এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-12-18

Wednesday 23 November 2011

বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : দৌলতপুরে কৃষককে অপহরণ

ডেস্ক রিপোর্ট

যশোরের বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে এক কৃষককে। বিস্তারিত আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
বেনাপোলে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা : বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে বাতেন আহম্মেদ নামে বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
পুটখালি বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে বাংলাদেশী একদল ব্যবসায়ী ভারত থেকে গরু কিনে দেশে ফিরছিলেন। এ সময় ভারতের আংরাইল সীমান্তের বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা এ সময় পালিয়ে গেলেও বাতেনকে ধরে বিএসএফ সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তারা তার লাশ নিয়ে যায়। নিহত বাতেন যশোরের শেখহাটি এলাকার খায়রুল বাসারের পুত্র। এ ঘটনায় উভয় সীমান্তে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দৌলতপুর সীমান্তে কৃষক অপহরণ : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে এক বাংলাদেশী কৃষককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বিজিবি সদস্যরা ওই কৃষককে ফেরত পেতে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিজিবি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের দেরেশ মণ্ডলের ছেলে খবির উদ্দিন (৩১) বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ঘাস কাটতে ছিল। এ সময় ভারতের মধুগাড়ি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ফেরত পেতে বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
এ ব্যাপারে বকমারী ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আ. মালেক জানান, দু’দেশের অমীমাংসিত জমিতে ওই কৃষক ঘাস কাটছিলেন। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সমঝোতা হবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার ছাড়া হত্যার দায়মুক্তিকে উত্সাহী করবে : বিএসএফের হত্যায় বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে


স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, আহত করা ও অপহরণ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নিষ্ক্রিয়তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। গতকাল অধিকার অক্টোবর মাসের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে সীমান্ত হত্যা ও অপহরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫ নাগরিক, ৮ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনির শিকার হয়ে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বিএসএফ আরও ৩ বাংলাদেশীকে আহত করেছে এবং ৬ বাংলাদেশীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অক্টোবর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই হচ্ছে কন্যাশিশু। বাকি ১২ জন হলেন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। ৩৫ কন্যাশিশুর মধ্যে আবার ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ধর্ষণের কারণে আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
যদিও ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী তোলপাড় করেছিল। এখন প্রতিনিয়ত ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব।
অধিকারের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে সাতক্ষীরায় তাদের একজন নারী মানবাধিকার কর্মী বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে পেট্রোবাংলাকে বিশিষ্ট ৩ নাগরিকের চিঠির জবাব ২৯ দিনেও পাওয়া যায়নি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ৩ নাগরিক এ চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির জবাব না দেয়ায় অধিকার মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক, দুইজন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলাম। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়’ বক্তব্যটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তিকেই উত্সাহিত করছে বলে অধিকার মনে করে। বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় নিন্দা জ্ঞাপন করছে। অধিকার মনে করে, বিএসএফের এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব এবং বিজিবির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়েও অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

Monday 31 October 2011

অধিকার-এর সরেজমিন প্রতিবেদন : রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে বিএসএফ



স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যতই আলোচনা হচ্ছে, ততই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশীদের হত্যার কৌশল পরিবর্তন করছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে বারবার সীমান্তে নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। বিএসএফ সদস্যরা এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে হত্যার কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। কখনও কাঁটাতারের বেড়ায় বিদ্যুত্ সংযোগ করে, কখনও পাথর ছুড়ে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা চলছেই।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যার শিকার রফিকুলের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে এ মন্তব্য করেছে। অধিকার সরেজমিন তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে বলছে, বিএসএফ নিরস্ত্র বাংলাদেশী রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে অধিকার সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে দাবি জানায়। নিহত রফিকুলের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার উফারমারা গ্রামে। তার স্ত্রীর নাম মোছাম্মত মিনি বেগম। রিয়াদ হোসেন (৮) ও রিফাত হোসেন (৬) নামে তার দুটি সন্তান রয়েছে। রফিকুল কৃষিকাজের পাশাপাশি বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন।
অধিকার সরেজমিনে গিয়ে নিহতের স্ত্রী মোছাম্মত মিনি বেগম (২৮), ভাই নজরুল ইসলাম (৪৫), চাচাতো ভাই আবেদার রহমান (৪৫), ৮নং বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের আনসার ভিডিপি কমান্ডার এনামুল হক, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ, ময়না তদন্তকারী লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস, হাসপাতালের মর্গ-সহকারী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ধবলসুতী বিওপি, পাটগ্রামের নায়েব সুবেদার মেজবাহ এবং রফিকুলের লাশের গোসলদানকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
বিএসএফ সদস্য কর্তৃক পাথর ছুড়ে রফিকুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে পাটগ্রামে সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে অধিকার জানতে পারে, চলতি বছর ২৪ জুলাই ভোর ৫টায় ভারত থেকে গরু নিয়ে সানিয়াজান নদী পার হওয়ার সময়ে ওই নদীর ভারতীয় অংশে নির্মিত ব্রিজের ওপর থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। পরে ব্রিজের ওপর তুলে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিএসএফের ছোড়া পাথরে দুটি গরুও মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনের বরাত দিয়ে অধিকার জানিয়েছে, বিএসএফ শুধু তাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, তার লাশ গুম করার লক্ষ্যে নদীতে বাঁশ পুঁতে তাতে বেঁধে রাখে। পরে খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এছাড়া পাথরের আঘাতে তার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল।
রফিকুলের স্ত্রীর বক্তব্য : মোছাম্মত মিনি বেগম অধিকারকে জানান, তার স্বামী একজন ভূমিহীন কৃষক। দুই সন্তান নিয়ে তার অভাবের সংসার। রফিকুল কৃষিকাজের অবসরে সীমান্তের বুড়িমারীর জিরো পয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন। চলতি বছর ২৩ জুলাই ৫টায় তার স্বামী বাজার করতে বুড়িমারীবাজারে যান। রফিকুল রাতে আর বাসায় না ফেরায় তিনি তার চাচাতো ভাশুর মো. আবেদার রহমানকে বিষয়টি জানান। আবেদার রহমান তাকে বলেন, রফিকুল গরু আনতে যেতে পারে। ২৪ জুলাই ভোরে তিনি মোবাইল ফোনে রফিকুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবারও আবেদার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবেদার রহমান তাকে জানান, ভোরের দিকে তিনি বুড়িমারী বাজারে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছেন, রাতে অনেকেই ভারত থেকে গরু নিয়ে ফিরলেও রফিকুল ফেরেনি। এছাড়া বাজারে অনেককেই বলাবলি করতে শোনেন, বিএসএফ সদস্যরা রাতে নদী পারাপারকারীদের পাথর ছুড়ে আঘাত করেছে। রফিকুলকেও পাথর ছোড়া হয়েছিল বলে বাজারের অনেকেই আলোচনা করছিলেন।
তারপর আবেদার রহমান রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তের বামনদল গ্রামে সানিয়াজান নদীর তীরে যান এবং নদী থেকে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি আনেন। লাশ বাড়ি আনার পরে পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা লাশ নিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ২৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায় লাশ বাসায় নিয়ে আসার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কপালে একটি ক্ষত ছিল, মাথার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল, নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
এসআই, পাটগ্রাম থানা : এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই দুপুর সোয়া ২টায় উফরমারা গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় আসেন এবং বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নম্বর-২১, তারিখ-২৪.৭.২০১১; ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি)। তিনি নিজেই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি বিকাল ৩টায় রফিকুলের বাড়ি যান এবং লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠায়। ২৫ জুলাই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে রফিকুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস : লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা রফিকুল নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতালে আনেন। তিনি জানতে পারেন, বিএসএফ সদস্যদের পাথরের আঘাতে রফিকুল মারা গেছেন। ২৫ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০টায় ডা. মোতাছিব, ডা. মেহেদী মাসুম ও তাকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, পাথর বা শক্ত কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করায় করোটির হার ফেটে গিয়েছিল, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই রফিকুলের মৃত্যু হয়েছে।

Saturday 1 October 2011

ফুলবাড়ী সীমান্ত থেকে ২ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিদ্যাবাগিশ সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশী যুবককে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে। মারধর শেষে গতকাল সকালে ওই দুই যুবককে বিএসএফ জেলহাজতে পাঠিয়েছে। বিজিবি তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকালে উপজেলার বিদ্যাবাগিশ ঠোস সীমান্তের আন্তর্জাতিক পিলার ৯৩৯ এর পাশের ভারতীয় অভ্যন্তরে নগরকুরষা সীমান্তে।
বিজিবি ও দুই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী বিদ্যাবাগিশ ঠোস গ্রামের কৃষক মোজাহার আলীর ছেলে মজিদুল ইসলাম ও নজির হোসেনের ছেলে হুজুর আলী নামের দুই যুবক বুধবার তাদের বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় নগরকুরষা সীমান্তের আত্মীয় জয়নাল পাগলার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায়। জয়নাল পাগলা আটককৃত যুবক হুজুর আলীর আপন চাচা। ওই বাড়িতে বিকাল ৪টায় তারা ভাত খেতে বসে। কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার কুরষাহাট
ক্যাম্পের বিএসএফ তাদের ভাত খাওয়া অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়। বিএসএফ সদস্যরা দুই যুবককে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশী দুই যুবককে ফেরত আনার ব্যাপারে কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবির ফুলবাড়ী গঙ্গারহাট বিওপির নায়েব সুবেদার নিশিকান্ত ও হাবিলদার আইয়ুব আলী জানান, তারা দুই যুবককে ফেরত পেতে পদক্ষেপ নেয়ার আগেই বিএসএফ তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তবে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে তারা বিএসএফকে পত্র দেবেন।

Saturday 24 September 2011

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকারের কেসস্টাডি : কারণ ছাড়াই বিএসএফ গুলি করে মেরেছে সিলেটের আশরাফুলকে



স্টাফ রিপোর্টার

সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষী (বিএসএফ) গুলি চালিয়ে নিরপরাধ বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে অধিকার’র অনুসন্ধানে। সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিডর ধলাই নদী এলাকায় পাথরের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে প্রাণ হারায় আশরাফুল। আশরাফুলকে নির্দয়ভাবে হত্যা করার ঘটনাটি বেসরকারি সংস্থা অধিকার কেসস্টাডি হিসেবে গ্রহণ করে অনুসন্ধান চালায়।
অধিকারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই রাত ৯টায় একই উপজেলার বাঘারপাড় গ্রামের মো. আবদুুল আহাদ ও লালবানুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২০), একই গ্রামের মৃত কনু মিয়া ও হাওয়াতুন নেছার ছেলে সোনা মিয়া (১৯) এবং পারুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের আফতাব আলী ও আমিরুন নেছার ছেলে এলাইছ মিয়া (২২) পাথর আনতে সীমান্ত এলাকায় ধলাই নদীর বাংলাদেশ অংশে কালিডর পাথর কোয়ারিতে যায়। ভারতের শিলং অঞ্চলের ভোলাগঞ্জ থানার কালিডর ক্যাম্পের ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আশরাফুল ও এলাইছ গুলিবিদ্ধ হয়। আশরাফুল ও এলাইছের পরিবার গুলিবিদ্ধ দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আশরাফুল মারা যায় এবং এলাইছ মিয়াকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেখানে ৮ দিন চিকিত্সার পর বাড়িতে আনা হয়।
আবদুুল আহাদ অধিকার-কে জানান, তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম তাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করত। ঘটনার কয়েক দিন আগে পশ্চিম ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্ট’-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আশরাফুল খেলোয়াড়দের পুরস্কার দিতে চেয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফুল তার বন্ধু এলাইছ মিয়া ও সোনামিয়াকে নিয়ে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ ও বিক্রি করে পুরস্কার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনামতো ১ জুলাই আনুমানিক রাত ৮টায় আশরাফুল দু’বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়। রাত ৯টায় নৌকাযোগে ধলাই নদীর কালিডর পাথর কোয়ারিতে পৌঁছে। সেখানে আরও প্রায় এক-দেড়শ’ শ্রমিক পাথর তোলার জন্য গিয়েছিল। রাত আনুমানিক ৯টা ৫ মিনিটে সোনামিয়া আশরাফুলের বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায়, তার ছেলে ও এলাইছ পাথর তোলার জন্য নদীতে গেলে ভারতের বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। বিএসএফ’র ছোড়া গুলি বাংলাদেশের ২শ’ গজ ভেতরে থাকা আশরাফুল ও এলাইছের শরীরে বিদ্ধ হয়। সোনামিয়া মোবাইল ফোনে তাকে আরও জানায়, গুলিবিদ্ধ দুজনকে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত আনুমানিক ১০টায় সোনামিয়া কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের উন্নত চিকিত্সার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
রাত সাড়ে ১১টায় চিকিত্সক আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আবদুুল আহাদ আরও জানান, পরদিন, ২ জুলাই আশরাফুলের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল সাড়ে ৫টায় হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে রওনা দিয়ে বাসায় পৌঁছে রাত সাড়ে ৯টায়। এর পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি আরও জানান, আশরাফুলের মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত ৩৩টি ছররা গুলি লেগেছিল বলে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের কাছ থেকে জেনেছেন। তার অপর ছেলে নজরুল ইসলাম ২ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এলাইছ মিয়া অধিকার-কে জানায়, ১ জুলাই সে তার বন্ধু আশরাফুল ও সোনামিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পাথর তোলার জন্য নৌকায় করে সীমান্ত এলাকার কালিডরে যান। সেখানে তখন প্রায় এক-দেড়শ’ শ্রমিক পাথর তুলছিল। এ সময় রাতের অন্ধকারে ভারত সীমান্ত থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের কেউ পানিতেই বসে পড়ে আবার অনেকে ডাঙায় শুয়ে পড়ে। বিএসএফ সদস্যদের গুলি এসে তার এবং আশরাফুলের শরীরে লাগে। সে জানায়, সেগুলো ছররা গুলি হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে তা বিদ্ধ হয়। গুলি ছোড়া বন্ধ করে বিএসএফ সদস্যরা চলে গেলে উপস্থিত শ্রমিকদের সহায়তায় সোনামিয়া তাকে ও আশরাফুলকে চিকিত্সার জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দুজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং সে নিজে ওই হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৪নম্বর ওয়ার্ডে ৮দিন চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তার শরীরে ২৫-২৬টি ছররা গুলি লেগেছিল। সে শুনেছে, আশরাফুলের মাথায় ও বুকের নিচে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোনামিয়া অধিকার-কে বলে, আশরাফুল ও এলাইছের সঙ্গে ১ জুলাই পাথর তোলার জন্য কালিডর এলাকায় যায়। তারা বাংলাদেশের ২শ’ গজ ভেতরে পাথর তোলার জন্য গেলে রাতের অন্ধকারে বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। এতে আশরাফুল ও এলাইছ গুলিবিদ্ধ হয়। সে তখন মোবাইল ফোনে এলাইছ এবং আশরাফুলের বাড়িতে তাদের আহত হওয়ার খবর জানায়। সে ও শ্রমিকরা গুলিবিদ্ধ দুজনকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। তখন সে তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার আশরাফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্ত ডা. আবদুুল্লাহ অধিকার-কে বলেন, কয়েকজন লোক ১ জুলাই রাত ১০টায় কালিডর থেকে গুলিবিদ্ধ আশরাফুল ও এলাইছ মিয়া নামে দুজনকে নিয়ে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। তিনি দুজনকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নিতে বলেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ পরির্দশক কামাল আহমদ অধিকার-কে বলেন, ২ জুলাই রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে বাঘারপাড় গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় এসে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে নজরুল ইসলাম উল্লেখ করে, তার ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম ১ জুলাই বন্ধু এলাইছ মিয়া ও সোনামিয়াকে নিয়ে পাথর আনতে সীমান্ত এলাকার ধলাই নদীর বাংলাদেশ অংশে কালিডর পাথর কোয়ারিতে যায়। অজ্ঞাতনামা বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তার ভাই আশরাফুল মারা যায়।
পুলিশ পরিদর্শক কামাল আহমদ এর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের কিছু অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা পাথর তুলতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বেআইনিভাবে গুলি ছোড়ে। এতে প্রায়ই মানুষ মারা যায়। এসব বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও জানেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র সুবেদার চান মিয়া অধিকার-কে বলেন, ১ জুলাই এ ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে অপারগ। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সহকারী মাসুক আহমদ অধিকার-কে বলেন, ১ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টা ৪৫মিনিটে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে আনেন। ২ জুলাই দুপুরের দিকে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। লাশের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লেগেছিল। তাছাড়া লাশের শরীর থেকে বেশ কিছু গুলি বের করে পুলিশকে আলামত হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়। আশরাফুলের লাশের গোসলদানকারী আবদুুল বারী অধিকার-কে বলেন, তিনি আজিজুল হক ও আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আশরাফুলের লাশের গোসল দিয়েছেন। লাশের মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত অনেক ছররা গুলির চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান। এছাড়া প্রচুর রক্তক্ষরণেরও চিহ্ন ছিল।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকার’র মন্তব্যে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা অবিরত ঘটেই চলেছে। গত ১২ মার্চ ভারতের নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বিএসএফ’র মধ্যে ৫দিনের বৈঠকের শেষ দিনে বিএসএফ’র মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তব জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত আর প্রাণঘাতী অস্ত্র চালাবে না; তবুও সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে ভারত নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা করছে

ভারতে দলিতদের চেয়ে মুসলমানদের অবস্থা খারাপ


স্টাফ রিপোর্টার
ভারতে নিম্নবর্ণের হিন্দু দলিতদের চেয়ে মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিছুসংখ্যক মুসলমানের অবস্থার উন্নতি হলেও এ চিত্র ভারতীয় আর্থসামাজিক অবস্থার অসামঞ্জস্যেরই ইঙ্গিত বহন করে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে টিকে থাকতে এবং বহিঃশক্তির প্রভাবে মুসলমানরা বহুধাবিভক্ত হয়েছে। আর এই বিভক্তি তাদের জন্য অনেকটাই অপমানের।
নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের এক তারবার্তা প্রকাশ করে এমন খবর দিয়েছে সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ইউএস ভিউজ অন ইন্ডিয়ান ইসলাম অ্যান্ড ইটস ইন্টারপ্রেটেশন’ শিরোনামে দিল্লি থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো ওই তারবার্তাটি প্রকাশ করেছে উইকিলিকস।
এছাড়া তারবার্তাটিতে ভারতীয় মুসলমানদের শিয়া-সুন্নির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেরেলভি ও দেওবন্দির গ্রুপের মতো পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতে অন্তত ১৮ কোটি মুসলমান রয়েছে, যা ভারতের আদমশুমারিতে অনেক কম দেখানো হয়েছে। ভারতীয় অনেক সূত্রের বরাত দিয়ে তারবার্তাটিতে বলা হয়েছে, সরকারি হিসাব (আদমশুমারি ২০০১) অনুযায়ী ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ১৩ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু আমেরিকা মনে করে, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের মতে, সংখ্যাটি ১৬ থেকে ১৮ কোটি।
তারবার্তায় ভারতীয় মুসলমানদের উদারপন্থি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছে, আজিম প্রেমজির মতো কোটিপতি থাকলেও ভারতে বেশিরভাগ মুসলমানের অবস্থা খুবই খারাপ। তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, কোটিপতি মুসলিম ভারতীয়রা দেশটির অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানের মতো আইকনদের অসংখ্য ভক্ত রয়েছে ভারতে। তবে সেখানকার মুসলমানরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তারবার্তায় বলা হয়, ভারতের পার্লামেন্ট বা অন্যান্য নির্বাচনী বডিতে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

Tuesday 16 August 2011

সিলেট সীমান্তে বিএসএফ ও খাসিয়াদের গুলিতে নিহত ২











দেলোয়ার হোসেন জৈন্তাপুর (সিলেট)
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এবং খাসিয়া নাগরিকদের যৌথ আক্রমণে গুলিতে দুই বাংলাদেশী পাথর শ্রমিক নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। গতকাল ভোররাতে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে ১২৬৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। ভারতীয়রা তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করে। এনিয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সফরকালে ওয়াদা করেছিলেন সীমান্তে আর কোনো বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করা হবে না। তার এ প্রতিশ্রুতির মাত্র ১১ দিনের মাথায় গুলি করে বাংলাদেশী জোড়া খুন করল ভারত। এর আগে গত ২৩ জুলাই
ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশ সফরের দিনও সীমান্তে বাংলাদেশী খুন করেছিল ভারত।
সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে গতকাল নিহতরা হলেন, বিছনাকান্দি গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে কামাল উদ্দিন জহুর (৩২) ও ইরফান আলীর ছেলে কামাল আহমদ (৩০)। আহত হয়েছেন একই গ্রামের সারং উদ্দিনের ছেলে ইমাম উদ্দিন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকারে করে বলেছেন, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা লাশ দুটি উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসন লাশ সিলেটে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে চাইলে আত্মীয় ও এলাকাবাসী আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে আসা এক শ্রমিক জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির বগাইয়া নদীতে ১২৬৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাথর উত্তোলন করতে যায় তিন শ্রমিক। এ সময় বিএসএফ ও ভারতীয় খাসিয়ারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই দু’জন বাংলাদেশী শ্রমিক মারা যায়। একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পালিয়ে আসা আহত শ্রমিক গ্রামবাসীদের ঘটনা জানালে লাশের সন্ধানে গ্রামের মানুষ ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশের সন্ধান করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোর ৬টায় একজন এবং সকাল ৯টায় আরও একজনের লাশের সন্ধান পান তারা। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিলেট সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আজম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ধ্যার পর কোয়ারি এলাকায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও এসব শ্রমিক রাতের আঁধারে সেখানে গিয়েছিল। তিনি জানান, বিজিবি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বিএসএফ’র সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গত সন্ধ্যায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি ইউনুছ মিয়া জানান, ভোর সাড়ে ৪টায় ১২৬৩ সীমানা পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোয়ারি এলাকার বগাই নদীতে নৌকাযোগে পাথর উত্তোলন করতে যান কয়েকজন বাংলাদেশী। এ সময় ভারতীয়রা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওসি আরও জানান, আত্মীয় ও এলাকাবাসীর দাবির কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিকাল ৫টায় বিছনাকান্দি জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সিলেট ৪-আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, বিএসএফ’র গুলিতে পাথর শ্রমিক নিহত হওয়া আবারও ভারত জাতীয় বেইমানির পরিচয় দিল। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন সীমান্তের লোকজনের ওপর আর কোনো গুলি চালাবে না ভারত, এতে প্রমাণ হয় ভারত তার দৃষ্টিভঙ্গি বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করেনি।
এ ব্যাপারে গেয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, তিনি ঘটনার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ঘটনার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি, নিহতের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য আবেদন জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফনের সুযোগ দিয়েছি।
ইলিয়াস আলীর প্রতিবাদ : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনিপর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী এক বিবৃতিতে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে দু’জন নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একের পর এক হামলা চালিয়ে নিরীহ বাংলাদেশীদের অব্যাহতভাবে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। ভারতের সেবাদাস এ সরকার এসব হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হামলা এবং জমি দখলের প্রচেষ্টার ন্যূনতম কোনো প্রতিবাদ করছে না। সীমান্তে যৌথ জরিপের নামে একতরফাভাবে বাংলাদেশের জনগণের বসতভিটা ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত করছে। এরই মধ্যে সরকার পাদুয়া, বিবির হাওড় ও বিছনাকান্দিসহ সীমান্তে একতরফা জরিপ করে যাচ্ছে। সরকার ভারতীয়দের নীল নকশানুযায়ী সীমান্তে জরিপ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁবেদার শেখ হাসিনা সরকার একদিকে বাংলাদেশের ভূমি প্রহসনের জরিপের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে। অপরদিকে ভারতীয়রা সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি সীমান্ত আজ অরক্ষিত। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/08/13/98971

Friday 5 August 2011

সৌদি আরব থেকে ফেরত আসছে ১০ লাখ বাংলাদেশী : বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ভারতের

সৈয়দ মিজানুর রহমান সৌদি আরব থেকে
আকামা (ওয়ার্কপারমিট) পরিবর্তন জটিলতার কারণে সৌদি আরব থেকে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ হয়ে যাওয়ায় এসব বাংলাদেশীর জেল-জরিমানা ও পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়েছে।
সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্ধেক প্রবাসী বাংলাদেশীই এখন অবৈধ। কারণ গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের ওয়ার্কপারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় বছর আগে সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি সৌদি আরব সফর করে এ বিষয়ে তেমন কোনো উলেল্গখযোগ্য সাড়া পাননি বলে জানা গেছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে যান বলেও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রুমি সাঈদ জানান।
জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় সৌদি আরবের ছোট-বড় বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশীরা বেকার হয়ে পড়ে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠে এবং বহু নতুন কোম্পানি চালু হয়। বেকার এসব বাংলাদেশী ওইসব কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় আকামা পরিবর্তন নিয়ে।
সৌদি সরকার গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন পুরোপুরি বন্ধ রাখায় নতুন নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব বাংলাদেশীকে বৈধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু সৌদি স্পন্সর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বহু বাংলাদেশী প্রবাসীকে সৌদি আরবে আকামা দেয়। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাগজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নবায়ন বন্ধ করে দেয়। যার ফলে তাদের অধীনে আসা বাংলাদেশীরা পড়ে বিপাকে।
কথা হয় আভায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক হাসান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু তার আকামা পরিবর্তন হয়নি। কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। কিন্তু আকামা না হওয়ায় তার দেশে ফেরা বা এখানে থাকা দুটিই অনিশ্চিত। যে কোনো মুহূর্তে সৌদি পুলিশ অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
রিয়াদের একটি শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী নাগরিক কবির হোসেন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবের বিভিন্ন কেম্প্পানিতে নিয়োজিত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী এখন অবৈধ। আকামা বদল না হওয়ায় এদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। অথচ এদের অনেকেরই এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে আসার খরচই ওঠেনি। এদের অধিকাংশই গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাগ্য বদলের আশায় এখানে এসেছিলেন।
মদিনায় গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ মদিনা শাখার সভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা আমাদের এ চরম ভোগান্তির কারণ। তিনি জানান, তার মতো আরও লাখ লাখ বাংলাদেশী চরম অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যে এখানে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদেশিদের জন্য সৌদি আরবে আকামার মেয়াদ থাকে ৩ থেকে ৫ বছর। এর মধ্যেই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অন্য সব দেশের জন্যই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের দরজা খোলা রয়েছে। ওইসব দেশের নাগরিকদের কোনো ভোগান্তিও নেই। কিন্তু ২০০৭ সালে হঠাত্ করেই বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর আশ্বাস পাওয়া গেছে চালুর। কিন্তু চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে তা আর হচ্ছে না।
বর্তমানে জেদ্দায় অবস্থানরত গেল্গাবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম অভিযোগ করেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশের ভাব-মর্যাদা উন্নয়নে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার। তিনি আরও জানান, সৌদি আরবে ভারতের একটি নিজস্ব পত্রিকা রয়েছে। তাছাড়া ভারতের প্রায় সবক’টি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সৌদি আরবের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অতি সহজেই ভারত তাদের নিজেদের ইমেজ তৈরি এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার দখল করা। আর এতে বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয় শ্রমিকরা।

Saturday 9 July 2011

ফরেন পলিসি' ম্যাগাজিনের রিপোর্ট ভারত-দুর্গের জন্য বাংলাদেশ ঘিরে দিল্লীর বার্লিন প্রাচীর

শাহেদ মতিউর রহমান : বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এখন ক্রমেই বিশ্বের অন্যতম রক্তঝরা একটি সীমান্তাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সীমান্তবিষয়ক জটিলতার সংবাদ শিরোনাম হলেও সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু ঘটনা প্রবাহ এবং বাংলাদেশ ও ভারতের এই সীমান্তের হত্যাকান্ড নিয়ে বেশ উদ্বেগেরও সৃষ্টি করেছে। সূত্রে প্রকাশ গত এক দশকে দু'দেশের এক হাজার ৭৯০ মাইল দীর্ঘ এই সীমান্ত ঘিরে প্রায় এক হাজার নিরপরাধ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভারত তার ২৫ সালা সীমান্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজটিও প্রায় সম্পন্ন করেছে। আগামী বছরের মধেই এর পুরো কাজটি তারা শেষ করতে চাইছে। তবে এত বড় একটি সীমানা ঘিরে ভারতের বেড়া নির্মাণের পরেও সীমান্তের এই হত্যাকান্ডের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। অনেকে আজ প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে কী ভারত-দুর্গের জন্য বাংলাদেশ ঘিরে দিল্লীর কোন বার্লিন প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি তাদের ২০১১ এর জুলাই-আগস্ট সংখ্যায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নির্বিচারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের ওপরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্কট কার্নি, জ্যাসন মিকলেইন ও ক্রিসটেইন হোলসারের সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ফেলানী হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে তুলে ধরা হয়েছে গত এক দশকের সীমান্ত হত্যার লোমহর্ষক নানা কাহিনী।
ম্যাগাজিনের ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে সীমান্তে বেড়া নির্মাণকে ভারতীয়রা তাদের জন্য একটি সর্বরোগ হরণকারী প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের বিবেচনায় এই বেড়া নির্মাণের ফলে মুসলিম জঙ্গিবাদ ও কাজের সন্ধানে বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশকারী বিদেশীদের আটকানো সহজ হবে। কিন্তু তার পরেও সীমান্তে যেভাবে হত্যাকান্ড চলছে তা বিশ্ব বিবেকের দরজায় আজ কড়া নাড়ছে।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভারতের এই নির্বিচার হত্যাকান্ড বন্ধ করতে ভারতের উচ্চ পর্যায়ে বার বার আবেদন নিবেদন জানানোর পরেও কিন্তু এই হত্যাকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। তবে তারা অনেক সময়েই আমাদেরকে এই বলে ওয়াদা দিয়েছে ও আশ্বস্ত করেছে যে তারা আর কোন হত্যাকান্ড ঘটাবে না কিংবা সীমান্তে তারা কোন ভারী অস্ত্রও আর ব্যবহার করবে না। কিন্তু কখনোই তারা বাস্তবে তাদের সেই কথা কিন্তু রাখেনি।
উপরন্তু ভারতের কর্তা ব্যক্তিরা বাংলাদেশীদের বিভিন্নভাবে অপরাধী সাজিয়ে এই হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে। এদিকে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম' এর প্রধান কর্মকর্তা কিরিটি রায় বলেছেন সাধারণত সীমান্তের লাইন ম্যানের সাথে অর্থ লেনদেন ছাড়া কেউই বেড়া পারাপারের জন্য ঝুঁকি নেন না। তারা বিএসএফকে ঘুষ দিয়ে অন্যমনস্ক করে অবৈধ অভিভাসীদের সীমান্ত পারাপারে সহায়তার এই কাজটি করে থাকে। ভারতের এই মানবাধিকার সংগঠনটি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অধিকার ও হিউম্যান রাইটস এর সাথে যৌথ উদ্যোগে সীমান্ত হত্যাকান্ড ও সমসাময়িক বিষয়ে একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। ঐ প্রতিবেদনে মাসুম এর প্রধান কিরিটি বলেন, সীমান্তে ঘুষ প্রথার কারণেই সেখানে এই হত্যাকান্ড বেশি ঘটে। ঘুষ না দিয়ে যদি কেউ সীমান্ত পার হতে চেষ্টা করে তাহলে লাইনম্যানরা বিষয়টি অস্ত্রধারী বিএসএফকে জানিয়ে দেয় এবং গুলী চালাতে উৎসাহিত করে।
সীমান্তে এই হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্য ভারতীয়রা বরাবরই নানা যুক্তি তুলে ধরে আসছে। তারা অনেক সময় বলে বেড়ায় নেহায়েত আত্মরক্ষার জন্যই সীমান্তরক্ষীরা গুলী চালাতে বাধ্য হয়। নচেৎ তারা কখনো গুলী করে না। তবে ভারতীয় এই কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য যে কতটা মিথ্যাচার আর সত্যের অপলাপ তার প্রমাণও পাওয়া যায় মাসুম অধিকার ও হিউম্যান রাটস'র পরিচালিত জরিপের ঐ গবেষণা প্রতিবেদনে। তিনটি সংস্থার যৌথভাবে পরিচালিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত এক দশকে সীমান্তে নিহত হয়েছে এমন একজনেরও পরিচয় পাওয়া যায়নি যিনি সীমান্ত পার হতে গিয়ে কোন অস্ত্র বহন করেছেন। প্রতিবেদনে এই তথ্যটিই এসেছে যে বড়জোর তার হাতে হয়তো একটি লাঠি বা কাস্তে ছিল। সংগঠন তিনটি সীমান্তে নিরীহ মানুষের ওপরে বিএসএফ'র বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=57059

সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে বাংলাদেশী হত্যা করছে

অলিউল্লাহ নোমান
নানা কৌশলে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করছে বিএসএফ। বন্দুকের গুলির পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপ করে এবং পিটিয়েও বাংলাদেশী হত্যা করা হচ্ছে। সীমান্তে পাখির মতো মানুষ হত্যা করছে বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ও মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সীমান্তে এত মানুষ খুন হয় না। শুধু খুন নয় ভূমি দখলেও মরিয়া ভারত।চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১৭ জন বাংলাদেশী নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরে চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে আরও ২ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিএসএফের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৪৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক। অপহরণ করা হয়েছে ৫ জনকে। সর্বশেষ গত ২ জুলাই সিলেটের ভোলাগঞ্জ সীমান্তে এক যুবককে গুলি করে এবং ৩০ জুন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে এক যুবককে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। ভারত বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করবে না বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও রক্ষা করছে না। গত ২৪ মার্চ জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৬ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৩৬ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৭০ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আগের বছরগুলোর মতোই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। মানুষ খুন হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে এমনকি বিষাক্ত ইনজেকশনও দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশীদের। গত ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় ফেলানী খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। পাঁচ ঘণ্টা তার লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখার পর ভারতে নিয়ে যায়। ত্রিশ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের কাছে ফেলানীর লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তব বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে স্পর্শকাতর কিছু স্থানে প্রাণঘাতী নয়, এমন আগ্নেয়াস্ত্র দেয়া হবে। এটি পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত। এতে সফল হলে দুই দেশের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। বিএসএফ মহাপরিচালকের এই বক্তব্যের পর গত ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার গাজীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বসন্তপুর গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে রেকাতুল ইসলাম (১৭) নিহত হয়। গত ৭ মে দিনাজপুর সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমানকে (৩০) সুন্দরা বিওপির প্রধান পিলার ৩১৬-এর সাব পিলার-৪ এর বিপরীতে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া বিএসএফ নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি হিসেবে বাংলাদেশীদের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট্রল ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ জুন যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা গ্রামের শাহীন, শরিফুল ইসলাম ও মুলফিক্কারকে বিএসএফ আটক করে হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাদের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট্রল ঢুকিয়ে দেয়। এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৮৩৮ নম্বর মেইন পিলারের কাছে মিজানুর রহমান নামে ২৮ বছরের এক যুবককে ২৮ জুন পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। ভারতের ১০৪ বিএসএফের বিএসবাড়ি ক্যাম্পের টহল সদস্যদের ছোড়া গুলিতে মিজানুর রহমান নিহত হয়। বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরেই তাকে পাথর ছোড়া হয়। সীমান্তে বিএসএফের এই আক্রমণের ভয়ে এখন কৃষকরা চাষাবাদ করতেও ভয় পায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করলেও গুলি করে বা পিটিয়ে হত্যার বিধান পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। সীমান্ত অতিক্রম করলে প্রত্যেক দেশেই পাসপোর্ট আইনে মামলা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ভারত এই বিধানের তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশী নাগরিককে সীমান্তের কাছাকাছি দেখলেই গুলি করছে। রাতে কোনো কোনো সীমান্তে কারফিউ জারি থাকে।

Wednesday 29 June 2011

সিলেট সীমান্তে জনতার প্রতিরোধে এবার রক্ষা পেল ৫০ একর ভূমি : প্রতিবাদকারীদের বিএসএফের হুমকি, বিজিবিকে দেখা যায়নি














মো. দেলোয়ার হোসেন, জৈন্তাপুর (সিলেট)
সিলেট সীমান্তে জনতার প্রতিরোধের মুখে এবার রক্ষা পেল বাংলাদেশের ৫০ একর জমি। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পাদুয়া সীমান্তের সোনারহাট মনাইকান্দি, কুলুমছড়া এলাকায় ১২৬৪নং পিলারের ৪-এস থেকে ১২৬৬নং পিলারের ১-এস পর্যন্ত গতকাল প্রায় ৫০ একর ভূমি ভারতকে সমজিয়ে দেয়ার কথা ছিল। এরই লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষে সহকারী পরিচালক (জরিপ) দবির উদ্দিন, ভারতের পক্ষে সানক্লিনের নেতৃত্বে উভয় দেশের ১৫-২০ জন জরিপ প্রতিনিধি দল ১২৬৪নং পিলারের ৪-এস থেকে জরিপ কাজ শুরু করে। দুপুর ১২টায় কুলুমছড়া গ্রামের ৫ শতাধিক জনতা জরিপ কাজে বাধা দেন। জরিপ বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপ টিম এলাকাবাসীকে বলে, এখানে কতটুকু ভূমি আছে এ বিষয়ে জরিপ কাজ হচ্ছে। স্থানীয় জনতা আগে থেকে জানতে পেরেছেন—জরিপ করে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ একর ভূমি ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরই প্রতিবাদে গ্রামবাসী জরিপ কাজে বাধা দেন। তখন বিএসএফ গ্রামবাসীকে তাড়া করতে থাকে। একপর্যায়ে বিএসএফ বাংলাদেশের ৫০ গজ ভেতরে প্রবেশ করলে জনতা আরও বেশি উত্তেজিত হন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকেন। সীমান্তের ধারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জীবনের বিনিময়ে ভূমি রক্ষা করার জন্য মানবপ্রাচীর গড়ে তোলেন সীমান্তবাসী। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরী বিডিআরের নতুন নামধারী বডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি সদস্যদের তখন ওই এলাকায় দেখা যায়নি। এর আগে গত শনিবার (১৮ জুন) সিলেটেরই তামাবিল সীমান্তে একইভাবে গণপ্রতিরোধের মুখে বাংলাদেশের ভূখণ্ড যৌথ জরিপের নামে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।গত ডিসেম্বর থেকে সীমান্তে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সীমান্ত পিলার পরিদর্শন, অপদখলীয় ভূমি চিহ্নিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপের যৌথ জরিপ কাজ শুরু হয়। ভারতীয় বিএসএফ ও নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে জরিপ কাজে বাধা দেয়। গত ৬ মাস ধরে একাধিক বৈঠকের পর জরিপ কাজ করতে দেয়নি ভারতীয় নাগরিকরা। গত ২ ও ৩ জুন ভারতীয় হাইকমিশনার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি পর্যায়ে বৈঠকের পর আবার জরিপ কাজ শুরু হয়। এই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আজও সীমান্তবাসী জানেন না। সীমান্তবাসী, বিজিবি ও প্রশাসনকে আড়াল করে উচ্চপর্যায়ের জরিপ টিম ভারতকে বাংলার ভূখণ্ড তুলে দিতে এই জরিপ কাজ করছে বলে সীমান্তবাসী জানান। কুলুমছড়া এলাকার আজিজুর রহমান, জলিল মিয়া, আবদুল কাদির, মুখলেছ মিয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসী এই প্রতিবেদককে জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। ফসলাদি ফলানো আমাদের প্রধান কাজ। কিন্তু গত দু’বছর ধরে ভারতীয় বিএসএফের বাধার ফলে আমরা কৃষিকাজ করতে পারছি না। তারা আরও জানান, ১৯৫২ সালে ও ২০০২ সালে সীমান্তের জরিপ কাজ হয়। সীমান্তের এই ভূমিগুলো এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। এলাকাবাসী আরও জানান, ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, কৃষিজমি ও ফসলাদি দখল করে নিতে চায়। ভারতীয় এই আগ্রাসী তত্পরতা সীমান্তবাসী জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবেন। এলাকাবাসীর বাধার মুখে জরিপ না করে উভয় দেশের জরিপ দল ফিরে চলে যায়। এ বিষয়ে জরিপ টিমের সঙ্গে আলাপকালে তারা কোনো কথা বলতে রাজি নয় বলে জানান। তারা বলেন, উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে

জয়পুরহাটে আরও একজন নিহত : বিএসএফের উপর্যুপরি খুন

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের পাঁচবিবির নন্দাইল সীমান্তে গতকাল ভোরে বিএসএফের গুলিতে ফজলু মিয়া (৩৯) নামে আরও এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত ফজলু জেলার পাঁচবিবি উপজেলার নন্দাইল গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। মাত্র একদিন আগে বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে আবদুুল আলিম (৩৫) নামে আরেক বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।
জয়পুরহাট-৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীন হাটখোলা সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েব সুবেদার জাহাঙ্গীর আলম ও এলাকাবাসী জানায়, ভোর ৪টার দিকে ভারত সীমান্তের ২৭৯-এর ১৮ সাব-পিলার এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে দিয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের গরু দিতে আসে। বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীরাও সেখানে যায়। এ সময় ভারতের সিঁধাই ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। তাদের গুলি ফজলু মিয়ার (৩৯) গলায় বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে বিএসএফ লাশটি ভেতরে নিয়ে যায়। বিজেবির হাটখোলা সীমান্ত ফাঁড়ি লাশ ফেরত চেয়ে ও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফের সিঁধাই ক্যাম্পে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

Tuesday 31 May 2011

ফারাক্কার মারাত্মক প্রভাব : ৫৩ নৌরুট বন্ধের উপক্রম













ইলিয়াস খান
ফারাক্কার ভয়াবহ প্রভাব এবার দেশের নদ-নদীর ওপর পড়তে শুরু করেছে। একের পর এক নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চলাচলের মূল মাধ্যম নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) এ পর্যন্ত দেশের ৫৩টি নৌরুটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দ্রুত এসব নৌরুটে ড্রেজিং কাজ শুরু করা না হলে নৌ-যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব রুট সচল রাখতে এরই মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে একনেকে। এ বিষয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, প্রাথমিকভাবে ৫৩টি নৌরুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য ১১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে আমরা একনেকে পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি পাস হলে নৌরুটগুলোকে সাবেক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ প্রকল্পটির আওতায় ৩টি ড্রেজার ২০১১ সালের এপ্রিল-মের মধ্যে পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য সহায়ক জলযান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র সংরক্ষণ, খনন কর্মসূচির আওতায় নৌ-চলাচলে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ও নৌরুটগুলোর নাব্য অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর নাব্য উন্নয়ন কল্পে ৫৩টি নৌপথে ৯ বছর মেয়াদি ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীভুক্ত মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ নৌপথের নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-নৌপথে ড্রেজিং শীর্ষক একটি প্রকল্প ২৫ জানুয়ারি একনেক অনুমোদন দিয়েছে এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় ২৪ নৌপথ) শীর্ষক একটি প্রকল্প ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে ড্রেজিং শীর্ষক অপর একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় ২৪ নৌপথ) প্রকল্পের ডিপিপির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১০ সালের ২২ আগস্ট পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেজিং দরপত্র পুনর্নির্ধারণ পূর্বক ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠন শেষে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের ওপর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে ৩ মার্চ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় যা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীনের নিমিত্তে ৩ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যে ২৪টি রুট ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-রুট, চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল রুট, গাশিয়াখালী-বরিশাল- কালিগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা নৌরুট, ভৈরব বাজার-লিপসা-চটক-সিলেট নৌরুট, গাজলাজর-মোহনগঞ্জ রুট, লোয়ারগা- দুলোভপুর রুট, চিটরি-নবীনগর-কুটিবাজার নৌরুট, নরসিংদী-কাটিয়াদী নৌরুট, নরসিংদী-মরিচাকান্দি-সেলিমগঞ্জ-বাঞ্জারামপুর-হোমনা নৌরুট, দাউদকান্দি- হোমনা-রামকৃষ্ণপুর রুট, চাঁদপুর-ইচুলি-ফরিদগঞ্জ রুট, বরিশাল-ঝালকাঠি-পাথরঘাটা নৌরুট, খুলনা-গাজিরহাট- মানিকদা রুট, নন্দীবাজার-মাদারীপুর নৌরুট, দিলালপুর-গৌরাদিঘার-চামড়াঘাট-নীলকিয়াটপাড়া-নেত্রকোনা রুট, মনুমুখ-মৌলভীবাজার নৌরুট, মিরপুর-সাভার নৌরুট, শ্রীপুর-ভোলা খেয়াঘাট-গঙ্গাপুর-ভোলা নৌরুট, চৌকিঘাটা- কালীগঞ্জ রুট, পটুয়াখালী-মীর্জাগঞ্জ রুট, হোসনাবাদ-টরকী-ফাঁসিতলা নৌরুট এবং দালারচর-বালিয়াকান্দি-বোয়ালমারী- কাশিয়ানি নৌরুট। অপর যে ১২টি নৌপথ ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো— ঢাকা-তালতলা-ডহুরী, জারিরা-মাদারীপুর-কবিরাজপুর-চৌধুরীর হাট-পিজাখালি-চরজানাজাত-কেওড়াকান্দি নৌরুট, লাহার হাট-ভেদুরিয়া নৌরুট, শাহেবের হাট-টুঙ্গিবাড়ী-লাহার হাট রুট, ঢাকা সদর ঘাট-ভিরুলিয়া-পাটুরিয়া-বাগাবাড়ী রুট, ডেমরা-ঘোড়াশাল-পলাশ রুট, ঢাকা-রামচর-মাদারীপুর নৌরুট, ঢাকা-শরিয়তপুর নৌরুট, চাঁদপুর-নন্দীরবাজার-শিকারপুর- হুলারহাট রুট, হুলারহাট-চরচাপালি-গোপালগঞ্জ রুট, নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি রুট এবং ঢাকা-সুরেশ্বর- আঙ্গারিয়া-মাদারীপুর-নৌরুট। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আশ্বাসের বাণী বহু শুনেছি এখন চাই বাস্তবায়ন। ৩টি নতুন ড্রেজার আনা হবে এমনটা শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এখনও নৌপথে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অল্প খরচে তারা ঢাকা-বরিশাল রুটে যাতায়াত করেন। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। বরিশালে গত ৩০ বছরে ২৭টি নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার অনতিবিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না করলে সব নৌরুট যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে যে ড্রেজারগুলো আছে তার বেশিরভাগ যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ কার্গো মালিক সমিতি অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক মো. ইউনুচ বলেন, ভাষানচর- গাশিয়াখালি-সন্ন্যাসী-চরমোনাইসহ বিভিন্ন রুটে প্রায়ই আটকা পড়ে জাহাজগুলো। পর্যাপ্ত ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকায় চর পরে ভরে যাচ্ছে বেশিরভাগ নৌরুট। সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে লঞ্চ ও কার্গো মালিকরা

বিএসএফের গুলিতে সাতক্ষীরা সীমান্তে বাংলাদেশী নিহত














শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে রহমত আলী (৩৫) নামের বাংলাদেশী এক রাখাল নিহত হয়েছে। ২৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে সাতক্ষীরা সীমান্তের ঘোনা জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাখাল রহমত আলী সাতক্ষীরা জেলা সদরের বাঁশদহা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে।
এদিকে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী রাখাল নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঘোনা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে।
সীমান্ত গ্রামবাসী জানান, রহমত আলীসহ কয়েকজন রাখাল গরু আনতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘোনা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যান। রাত ১২টার দিকে গরু নিয়ে ফেরার সময় ঘোনা সীমান্তের ৭নং মেইন পিলারের দেড়শ’ গজ অভ্যন্তরে ভারতের জয়নগর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় রহমত আলী ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। স্থানীয় লোকজন তার লাশ উদ্ধার করে ঘোনা বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেন ।
ঘোনা বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মতিউর রহমান জানান, বিএসএফের গুলিতে রহমত আলীর নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিজিবির পক্ষ থেকে গতকাল সকালে বিএসএফের জয়নগর ক্যাম্পে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী ঘোনা সীমান্তের ৭নং মেইন পিলারের জিরো পয়েন্টে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে রাখালরা গরু পাচারের সময় বিএসএফ বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করা হয়। নিরূপায় হয়ে গুলি চালাতে হয়েছে বলে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়। তবে রহমত আলীর মৃত্যুতে বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে আগামীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হবে বলে জানানো হয়। এছাড়া পতাকা বৈঠকে গরু পাচার নিয়েও কথা হয়।
বিজিবি ও বিএসএফের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দলের পক্ষে নেতৃত্বে দেন ভোমরা ক্যাম্পের সুবেদার মুনসুর হেলাল ও ভারতের জয়নগর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সউলকাসহান দত্ত।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক হারান চন্দ্র পাল জানান, লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে

Tuesday 26 April 2011

সীমান্তে শিশুসহ দুজনকে হত্যা করল বিএসএফ











সামিউল মনির শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
সাতক্ষীরার গাজীপুর সীমান্তে এবার এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। নিহত রাখাল শিশু রেকাতুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেলেও অপর একটি লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ সদস্যরা। বিএসএফের নির্বিচার গুলিতে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বহুবার সীমান্তে হত্যা বন্ধ রাখার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। কিন্তু সে আশ্বাস কোনোই কাজে আসছে না। বিএসএফের গুলিতে কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানীর নির্মম মৃত্যুর পর ভারত সরকার কথা দিয়েছিল তারা আর সীমান্তে গুলি চালিয়ে কাউকে হত্যা করবে না। সীমান্তহত্যা শূন্যের কোটায় আনারও আশ্বাস দেয়া হয়। এমনকি প্রয়োজনে রাবার বুলেট ব্যবহারেরও ঘোষণা দেয়া হয়; কিন্তু কথা রাখেনি বিএসএফ।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত সংলগ্ন কলাপোতা এলাকায় গতকাল নিহত বাংলাদেশী শিশু রেকাতুল ইসলাম (১৫) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মুনছুর গাজীর ছেলে। সে পেশায় দিনমজুর। অপর নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। কারণ নির্বিচারে গুলির পর যে যেদিকে পেরেছে পালিয়ে গেছে। তবে একটি মৃতদেহ বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করে বশিরহাট থানায় নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আহত যে দুজনকে পাওয়া গেছে, তারা হলেন কালিগঞ্জ উপজেলার মাঘুরালি গ্রামের পোটাল মিঞার ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৪) ও শ্যামনগর উপজেলার জাবাখালী গ্রামের ইমান আলী মোল্লার ছেলে আজিজুল ইসলাম (৪২)।
জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের মোমিন গাজীর ছেলে রফিকুল ইসলাম সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীদাঁড়ি গ্রামের সাবুরালীর বাড়িতে অবস্থান করে ভারত থেকে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের গরু আনতে সহায়তা করে থাকে। রফিকুল রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুর সীমান্ত দিয়ে রেকাতুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, আজিজুল ইসলাম ও তারাসহ ২৮ জনকে ভারতে গরু আনতে পাঠায়। গরু নিয়ে ফেরার সময় গতকাল ভোর সাড়ে চারটার দিকে গাজীপুর সীমান্তের ৫ নং মেইন পিলারের ৬ নং সাবপিলারের বিপরীতে জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের ২০০ গজ ভেতরে কলাপোতা গ্রামে হেলাতলা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে কমপক্ষে আট রাউন্ড গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই রেকাতুলসহ দু’জনের মৃত্যু হয়। রেকাতুলকে জিরো পয়েন্টে ফেলে গেলেও বিএসএফ অপর নিহত গরুর রাখালকে বশিরহাট থানায় নিয়ে যায়। শাহাদাত হোসেন ও আজিজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের উদ্দেশে পাঠানো হয়। নিহত রেকাতুলের লাশ জিরো পয়েন্ট থেকে এনে তার বাবা মুনছুর গাজীর কাছে তুলে দেয়া হয়।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সীমান্তের ভোমরা এলাকার বিপরীতে বিএসএফের গুলিতে রেকাতুল ইসলাম নিহত ও শাহাদাত হোসেনের জখম হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নিহত রেকাতুলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত শাহাদাতকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার আবদুল আজিজ তার এলাকার বিপরীতে ভারতে এ ধরনের কোনো রাখাল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বা আহত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এদিকে আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিন তাকে আরও জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে রেকাতুল গাজীসহ কয়েকজন যুবক সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গরু আনতে যায়। গতকাল ভোরে গরু নিয়ে ফেরার পথে ভারতের বেলেডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলির মুখে পড়ে তারা। এ সময় বিএসএফ বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। গুলিবিদ্ধ যুবকদের মধ্যে আহত রেকাতুল গাজীকে বাড়িতে আনার পথে সে মারা যায়। সাতক্ষীরা ৪১ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক লে. কর্নেল এনায়েত করিম জানান, বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবক নিহতের কথা শুনেছেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে গত ২৭ মাসে ১৩৬ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত মার্চ পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ১৩৬ (২০০৯-এ ৬৭ জন, ২০১০-এ ৬০ জন ও চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৯ জন) বাংলাদেশী নিহত ও ১৭০ জন আহত হন। সাহারা খাতুন বলেন, মার্চে সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে রাবার বুলেটের মতো নন-লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়—এমন অস্ত্র) ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ভারত সরকার এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে রাবার বুলেট সরবরাহও করেছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এসেছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে।

নববর্ষে বিএসএফের উপহার এক বাংলাদেশীর লাশ











স্টাফ রিপোর্টার
নববর্ষে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশী নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর জেলার বেনাপোলের সাদীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত ওই যুবকের নাম মুন্না (১৮) ও আহতের নাম মামুন (২৩)। নিহত মুন্না বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামের খোকনের ছেলে ও মামুন নামাজ গ্রামের দীন মোহাম্মদ দীনুর ছেলে। এদিকে বিজিবি বলছে বিএসএফের গুলিতে একজন গুলিবিদ্ধ হলেও কেউ মারা যায়নি। গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তির নাম মনা। বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধি ও বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, বিএসএফ গুলি করে মুন্নার লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের ভিতরে নিয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএসএফ মুন্নার লাশ হস্তান্তর করেনি। ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি ৬টি গরু উদ্ধার করেছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার এস আই সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে বেনাপোলের সাদীপুর সীমান্তের লেবুতলা পোস্ট দিয়ে ১০/১২ জন ব্যবসায়ী গরু নিয়ে ভারতের জয়ন্তীপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরছিলেন। এ সময় প্যাট্রাপুল
জয়ন্তীপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে ৮/১০ রাউন্ড গুলি চালায়। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। মামুনের বুক ও পায়ে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মামুন বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে চলে আসতে সক্ষম হয়। তাকে প্রথমে যশোর ও পরে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। অপরজনের অবস্থা জানাতে পারেননি তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলিবিদ্ধ মুন্না ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল তিনি আহত হয়েছেন। পরে জানা গেছে তিনি মারা গেছেন। সাদীপুর গ্রামের সুলতান আহমেদ মেম্বার জানান, গরু ব্যবসায়ীরা সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফ ছয় রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে দু’জন আহত হয়। এদের মধ্যে একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। অন্যজনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বিজিবির ২২ ব্যাটালিয়ন প্রধান লে. কর্নেল হাসিব আলম গতরাতে আমার দেশকে জানান, তার জানামতে বিএসএফের গুলিতে একজন আহত হয়েছে। তার নাম মনা মিয়া। তার পা ও বুকে গুলি লেগেছে। তাকে প্রথমে যশোর ও পরে খুলনায় চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, গতকাল দুপুরেও বিএসএফের ৩৬ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট অনিল কুমার সিনহার সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি কোনো বাংলাদেশী নিহত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
বিএসএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধে বহুবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে রাবার বুলেট ব্যবহারসহ বিকল্প ব্যবস্থার কথা। কিন্তু ওইসব প্রতিশ্রুতি বরাবরই ভঙ্গ করে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুলি ও হত্যা করে চলেছে বিএসএফ। নববর্ষের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের নাগরিকের ওপর গুলিবর্ষণ করায় বেনাপোল সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

আশ্বাস দেয়ার পরও সীমান্তে বিএসএফের হত্যাযজ্ঞ : রাজশাহী সীমান্তে গুলিতে এক বাংলাদেশী নিহত

নাসির উদ্দিন শোয়েব

সীমান্তে হত্যা চলছেই। কথা রাখছে না ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ)। দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বহুবার সীমান্তে হত্যা বন্ধ রাখার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। কিন্তু সে আশ্বাস কোনোই কাজে আসছে না। বিএসএফের গুলিতে কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানীর নির্মম মৃত্যুর পর ভারত সরকার কথা দিয়েছিল তারা আর সীমান্তে গুলি চালিয়ে কাউকে হত্যা করবে না। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনারও আশ্বাস দেয়া হয়। এমনকি প্রয়োজনে রাবার বুলেট ব্যবহারেরও ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু কথা রাখেনি বিএসএফ। আবারও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এক বাংলাদেশীকে।
আমাদের রাজশাহী অফিস জানায়, জেলার পবা উপজেলার সোনাইকান্দি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সোমবার গভীর রাতে আলমগীর হোসেন কালু (৩০) নামের এক বাংলাদেশী নাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তবে তার নাগরিকত্ব নিয়ে বিজিবি ও পুলিশ ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। বিজিবি জানায়, নিহত ব্যক্তি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বাশগাটা গ্রামের দেরাজ হোসেনের ছেলে। তবে পবা থানা পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তি পবা উপজেলার বেড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এ ঘটনা নিয়ে বিজিবি ভুল তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। হাসপাতালের রেজিস্টারেও তার নাম-ঠিকানায় বাংলাদেশী উল্লেখ করলেও বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সে ভারতীয় নাগরিক। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সোনাইকান্দি বিওপির কোম্পানি কমান্ডার জানান, সোমবার রাত ১টার দিকে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আলমগীর এপারে (বাংলাদেশে) পালিয়ে আসে। সোনাইকান্দি এলাকার বিওপি সদস্যরা তাকে আহত অবস্থায় রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহী ৩৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার গাজী মোহাম্মদ খালিদ জানান, বিষয়টি তারা শুনেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পবা থানার উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, নিহত ব্যক্তি পবা উপজেলার বেড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার আত্মীয়রা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে গেছেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে গত ২৭ মাসে ১৩৬ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত মার্চ পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ১৩৬ (২০০৯-এ ৬৭ জন, ২০১০-এ ৬০ জন ও চলতি বছর ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৯ জন) বাংলাদেশী নিহত ও ১৭০ জন আহত হয়। সাহারা খাতুন বলেন, মার্চে সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে রাবার বুলেটের মতো নন লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়—এমন অস্ত্র) ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত সরকার এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে রাবার বুলেট সরবরাহও করছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এসেছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে।
সূত্র জানায়, ভারতীয় কোনো আশ্বাসই বাস্তবে প্রতিফলিত হয় না। দু’দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরও আগ্রাসী মনোভাব অব্যাহত রয়েছে। তারা নতুন নতুন কৌশলে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। গুলি করে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার পাশাপাশি তারা এখন সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এমনকি হাত-পায়ের রগ কেটে সীমান্ত সংলগ্ন নদীতেও ফেলে দেয়া হচ্ছে বলে সীমান্তের নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন।

সিলেট সীমান্তে যৌথ জরিপ কাজে ভারতের বাধা : বিভিন্ন সীমান্তে সহস্রাধিক একর বাংলাদেশের জমি দাবি ভারতের

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি

সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিশন ২য় পর্যায়ের জরিপ কাজে বাধা দিচ্ছে ভারত। ডিবির হাওর সীমান্তে ৫৫ একর ৩০ শতক এবং একই সুরে পাদুয়া সীমান্তে ৩২০ একর বাংলাদেশের ভূমি ভারতের বলে দাবি করছে ভারতের জরিপ টিম। তবে তারা কিসের বলে এ ভূমি দাবি করছে সে ব্যাপারে কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের টিমকে। এ নিয়ে একপর্যায়ে দু-দেশের জরিপ টিমের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে ভারত জরিপ কাজে বাধা দেয় এবং ভূমি জরিপ না করে বাংলাদেশের টিম চলে আসে। জরিপ কাজ চলা অবস্থায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তভূমি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে সমস্যা হচ্ছিল। জোর করে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে ভারতীয় নাগরিদের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া, জমির ফসল কেটে নেয়া, সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করা, গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিল বাংলাদেশী সীমান্ত নাগরিকরা। এ নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একাধিক বার গোলাগুলি হয়, যার ফলে শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক আহত হন।
এ ঘটনায় বিজিবির মহাপরিচালক ও সিভিল প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা সাপেক্ষে জরিপ কাজের মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিত করার আশ্বাস দেন এবং সীমান্তবাসীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার কথা বলেন। এই আলোকে গত ১৩ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাট সীমান্ত থেকে কানাইঘাট সীমান্ত পর্যন্ত যৌথ জরিপ কাজ শুরু হয়।
ওই উপজেলার সীমান্তে ভারতীয়রা বাংলাদেশের প্রায় সহস্রাধিক একর ভূমি তাদের বলে দাবি করে। এতে কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি ভারত। কিছুদিন জরিপ কাজ চলার পর ভারতীয়দের বাধার মুখে বন্ধ হয়ে যায় জরিপ কাজ।
সর্বশেষ গতকাল ৫ এপ্রিল উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পর পাদুয়া সীমান্তের ১২৭০ নং পিলার ও ডিবির হাওর ১২৮৪নং পিলার থেকে সীমান্তে যৌথ জরিপ কাজ শুরু হয়। ডিবির হাওরে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক, ভূমি জরিপ রেকর্ড অধিদফতরের চার্জ অফিসার আবদুল কাদের, সার্ভেয়ার মো. ইব্রাহিম খলিল ও মোকাদ্দেছ আলী, জৈন্তাপুর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোস্তফা কামাল ও দেলোয়ার হোসেন এবং ভারতের পক্ষে মেঘালয়ের সহকারী পরিচালক শ্রী মারইন, ক্যাম্প অফিসার শ্রী এলিন, সার্ভেয়ার শ্রী এ ই এল ল্যান্ড উপস্থিত ছিলেন। পাদুয়া সীমান্তে বাংলাদেশের পক্ষে সিলেটের এডিসি জেনারেল শামীম আল রাজী, কানুনগো আজহার এবং ভারতের পক্ষে সহকারী পরিচালক সাং প্লিয়াং ও সার্ভেয়ার তরুণ মারক উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় উভয় স্থানে জরিপ কাজ করতে গেলে ভারতীয় জরিপ টিম ডিবির হাওর সীমান্তে ৫৫ একর ৩০ শতক এবং পাদুয়া সীমান্তে ৩২০ একর বাংলাদেশের হাজার গজ অভ্যন্তরে দাবি করে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জরিপ টিম প্রমাণপত্র দেখতে চাইলে কোনো ধরনের প্রমাণপত্র ভারতীয়রা দেখাতে পারেনি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ভারতীয়রা জরিপ কাজে বাধা দেয় এবং উচ্চপর্যায়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে জরিপ কাজ হবে কিনা তা ডিবির হাওরে আগামী ৭ এপ্রিল ও পাদুয়ায় ৬ এপ্রিল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানায়। ভারতীয়দের বাধার মুখে বাংলাদেশী জরিপ টিম জরিপ কাজ না করে চলে আসে।
এ ব্যপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফজুলল হকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ভারতীয়রা সীমান্ত পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যায়ভাবে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ভূমি দাবি করছে, যা আমরা কোনোমতেই মানতে রাজি না হওয়ায় তারা জরিপ কাজ করতে বাধা দেয়। তবে আগামী ৭ এপ্রিল জরিপ কাজ হবে কিনা তারা জানাবে। উভয় দেশের জরিপ টিম কাজ করার সময় বিজিবি ও বিএসএফকে সীমান্তে সতর্কাবস্থানে দেখা যায়।

পানি আগ্রাসনের শিকার বাংলাদেশ

আলাউদ্দিন আরিফ

বিশ্বের সর্ববৃহত্ মরুভূমি সাহারা একসময় ছিল ছোট ছোট নদী ও হ্রদবিশিষ্ট শস্যশ্যামল প্রান্তর। রোমান সাম্রাজ্যের শস্যভাণ্ডার ছিল এই সাহারা অঞ্চল। কিন্তু লোনা পানির আগ্রাসনে সাহারা আজ বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি। ভারত আগ্রাসন চালিয়ে মিঠা পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখলে এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা লোনা পানির অবাধ বিস্তার দূরভবিষ্যতের কোনো একসময়ে বাংলাদেশকেও সাহারা মরুভূমির ভাগ্যবরণ করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতের একতরফা পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর ৪২টিতে বাঁধ দিয়েছে ভারত। এসব বাঁধের ফলে লবণাক্ততা বাড়ায় এখনই ২০ ভাগ জমি অনাবাদি থাকছে এবং আরও ৩০ ভাগ জমিতে ফসল উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ভারত আসামের ধুবরী এলাকায় ব্যারাজ নির্মাণ করে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ ও আন্তঃনদী অববাহিকা সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত গ্রীষ্ম ও বর্ষা উভয় মৌসুমে গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। মেঘনার উজানে বরাক নদীতে কার্যকর করছে টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারাজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের নদীমাতৃক পরিচয়টুকুও শুধু হারিয়ে যাবে না, পরিণত হবে মরুভূমিতে।
ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। এর তিন দিকে ভারত ও মিয়ানমার আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটার টানে সাগর থেকে ঊঠে আসে লোনা পানি। এই লোনা পানিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসা প্রতিরোধ করে উজান থেকে আসা নদ-নদীগুলোর মিঠা পানি। বাংলাদেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানিপ্রবাহের মূল উত্স সীমান্ত নদী।
দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি অববাহিকা বাদে গঙ্গা-পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা এই তিন নদীর অববাহিকায় বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতের একতরফা পানি আগ্রাসনে দেশের সব কয়টি অববাহিকার নদ-নদীগুলো শুকিয়ে পরিণত হয়েছে মরাগাঙে। শুকনো মৌসুমে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোকে মনে হয় প্রকৃতির ক্ষতচিহ্ন। এগুলোতে এখন চাষ হয় ধান, গম, আখ ও কলাসহ নানা ফসলের। দক্ষিণের নদীগুলোতে জোয়ারে পানি আসে, ভাটায় নামে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিবিজ্ঞান জুন ২০০৫-এ প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৩১০টি। এর মধ্যে অভিন্ন নদী (আন্তর্জাতিক) ৫৭টি। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ৫৪টি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ভারত থেকে, আর ৩টি এসেছে মিয়ানমার থেকে।
সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে রাজশাহী, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম হয়ে শেরপুর সীমান্ত পর্যন্ত অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র বাদে সব কয়টি নদীতে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার চলছে। এই অভিন্ন নদীগুলো হচ্ছে রায়মঙ্গল, ইছামতি-কালিন্দি, বেতনা-কোদালিয়া, ভৈরব-কোবাদাক (কপতাক্ষ), মাথাভাঙা, গঙ্গা, পাগলা, আত্রাই, পুনর্ভবা, তেঁতুলিয়া, ট্যাঙ্গন, কুলীক, নাগর, মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তালমা, ঘোড়ামারা, দেওনাই-চাড়ালকাটা-যুমেনেশ্বরী, বুড়িতিস্তা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, জিঞ্জিরাম, চিতলখালী, ভোগাই, নিতাই, সুমেশ্বরী, যাদুকাটা রক্তি নদী। নেত্রকোনা থেকে সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা সুরমা ও কুশিয়ারার মূল নদী বরাক বাদে সব কয়টি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। এই এলাকা দিয়ে আসা নদী জালুয়াখালী, ধামালিয়া, নয়াগাং, উমিয়াম, ধলা, পিয়াইন, সারি গোয়াইন, সোনাই বরদল, জুরি, মনু, ধলাই, গোপাল-লংলা, খোয়াই, সুতাং, সোনাই, হাওরা, বিজনী, সালদা, গোমতী, কাকরি-ডাকাতিয়া ও সোলোনিয়ায় বাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারাজ সম্পন্ন হলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ ও একতরফাভাবে প্রত্যাহারের সুযোগ পাবে ভারত। মুহুরী ও ফেনী নদীতে বাঁধ দেয়া না হলেও বড় বড় পাম্প বসিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি নদী হচ্ছে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও নাফে কোনো বাঁধ নির্মাণের খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এসব বাঁধের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে ভাটির বাংলাদেশে। অধিকাংশ সীমান্ত নদীর উজানে বাধার কারণে শুকনো মৌসুমে প্রবাহবিহীন হয়ে পড়ে অধিকাংশ নদী। বর্ষায় স্লুইসগেটগুলো খুলে দিলেই দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা ও ঢল দেখা দেয়।
ভারতের পানি আগ্রাসনের বড় একটি নমুনা ফারাক্কা বাঁধ। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আস্তে আস্তে মরুময়তার দিকে চলে যাচ্ছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পশ্চিম প্রান্তে যেখানে পদ্মা-মহানন্দা মিলিত হয়েছে সেখান থেকে রাজশাহী শহর, চারঘাট হয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে বিশাল বিশাল বালুচর। পদ্মা তীরবর্তী মানুষ জানায়, গত বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি ছিল মাত্র কয়েকদিন। তারপর থেকে চর জাগতে শুরু করে এবং এখন পদ্মাজুড়ে শুধু ধু-ধু বালুর চর আর চর। পানি সঙ্কটের কারণে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ গড়াই কপতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প।
গত ৩৮ বছরে এ প্রবাহ শুধু কমেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি হয়। কিন্তু এতে তেমন কোনো সুফল আসেনি। যদিও যৌথ নদী কমিশন বরাবরই বলছে বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছে। চলতি মার্চের প্রথম ২০ দিনে বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পেয়েছে বলে যৌথ নদী কমিশন জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের চোখের সামনেই বড়াল, মরা বড়াল, নারদ, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়াসাগর, চিকনাই, নাগর, গড়াই, মাথাভাঙা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতাগ, কালীকুমার, হরিহর, কালীগঙ্গা, কাজলা, হিসনা, সাগরখালী, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলবাত নদী দিনে দিনে মরাগাঙে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এরই মধ্যে ১৩টি নদীর অস্তিত্ব বিলীনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের হিসাবে রায়মঙ্গল, কালিন্দি, বেতনা-কোদালিয়া, পাগলা, ট্যাঙ্গন, কুলিক, তেঁতুলিয়া, ঘোড়ামারা, তালমা, দেওনাই, চিনাখালী, কোনী, সালদা, বিজনী, হাওড়া, সোনাই, সুতাং, খোয়াই, লংগলা, ধলাই, মনু, জুরি, সোনাইবড়দাল, নিতাই ও ভোগাই নদীর অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের অন্যতম নদী তিস্তা ও বুড়ি তিস্তার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। তিস্তা ব্যারাজের ভাগ্য ঝুলে গেছে গজলডোবায়। সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে বা উদ্বৃত্ত হিসেবে যে পানি আসে তা দিয়েই চলে তিস্তা ব্যারাজ।
পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে পানির অভাবে নদীগুলো যখন মরা গাঙ, নদীর বুকে ধু-ধু বালুচর, পাম্প বসিয়েও পানি তোলা সম্ভব হয় না; ঠিক ওই সময় সিলেট অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে অকাল বন্যা। উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছরই হাজার হাজার একর জমির ফসল ধ্বংস হয়।
মেঘনায় পানি প্রবাহের মূল উত্স বরাক নদী। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ সীমান্তে বরাক দুটি স্রোতে ভাগ হয়ে সুরমা-কুশিয়ারা নাম নিয়েছে। অমলসীদের ১০০ কিলোমিটার উজানে মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নামক স্থানে বরাক নদীতে বাঁধ নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে ভারত। টিপাইমুখে ১৬৩ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরি করে বরাক ও তার উপনদীগুলোর মিলিত প্রবাহের গতিরোধ করে ৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার তৈরি করা হবে। টিপাইমুখ বাঁধের ভাটিতে আসামের কাছার জেলার ফুলেরতল নামক স্থানে একটি বড় বাঁধ তৈরি করে বরাক নদীর পানি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ফলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মোহাম্মদ আকতারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পানি আগ্রাসনের ফলে মহাবিপর্যয়ে পড়বে বাংলাদেশ। একসময়কার শস্যশ্যামল সাহারা অঞ্চল যেভাবে লোনা পানির আগ্রাসনে মরুভূমি হয়েছে তেমনি দূরভবিষ্যতে বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডেও ওই ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি বলেন, ফারাক্কার ফলে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, মহানন্দা ও করতোয়া বাঁধের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ শুরু হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ চালুর প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় মরুকরণ শুরু হবে। টিপাইমুখ বাঁধের ফলে ৪ থেকে ৫ কোটির বেশি মানুষ বিপর্যস্ত হবে। এইসঙ্গে ফারাক্কা বাঁধ এবং গঙ্গার উজানে আন্তঃনদী পানি স্থানান্তর প্রকল্পের প্রভাব একত্রিত করলে বাংলাদেশের ৬০ ভাগ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে।
বিশিষ্ট পানিবিজ্ঞানী জাতিসংঘের সাবেক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানার ড. এসআই খান বলেন, ভারতের অংশে ব্রহ্মপুত্রের প্রায় সব কয়টি উপনদীতে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করেছে ভারত। গঙ্গার উপনদীগুলোতেও বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। গঙ্গা, তিস্তা, গোমতী, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যসব অভিন্ন নদী থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিপর্যয় নেমে এসেছে ভাটির বাংলাদেশে।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে প্রধান ৩টি নদী অববাহিকার উপনদী ও শাখানদী নিয়ে আলাদা ৩টি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন ড. এসআই খান। তিনি বলেন, গঙ্গা ও এর উপনদীগুলো নিয়ে নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে একটি কমিশন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিষয়ে চীন, ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশ এবং মেঘনার পানি বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলাদা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এসব কমিশন কার্যকর করার জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংককে নিশ্চয়তা বিধানকারী (গ্যারান্টার) হিসেবে রাখতে হবে। বিশ্বের কার্যকর অন্য নদী কমিশনগুলোর আলোকে আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী প্রধান ৩ নদীর অববাহিকাভিত্তিক ৩টি কমিশন গঠন ও এগুলো কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। বেঁচে যাবে বাংলাদেশের নদীগুলো। এর মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও চীন সবাই লাভবান হবে