Tuesday 16 August 2011

সিলেট সীমান্তে বিএসএফ ও খাসিয়াদের গুলিতে নিহত ২











দেলোয়ার হোসেন জৈন্তাপুর (সিলেট)
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এবং খাসিয়া নাগরিকদের যৌথ আক্রমণে গুলিতে দুই বাংলাদেশী পাথর শ্রমিক নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। গতকাল ভোররাতে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে ১২৬৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। ভারতীয়রা তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করে। এনিয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সফরকালে ওয়াদা করেছিলেন সীমান্তে আর কোনো বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করা হবে না। তার এ প্রতিশ্রুতির মাত্র ১১ দিনের মাথায় গুলি করে বাংলাদেশী জোড়া খুন করল ভারত। এর আগে গত ২৩ জুলাই
ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশ সফরের দিনও সীমান্তে বাংলাদেশী খুন করেছিল ভারত।
সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে গতকাল নিহতরা হলেন, বিছনাকান্দি গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে কামাল উদ্দিন জহুর (৩২) ও ইরফান আলীর ছেলে কামাল আহমদ (৩০)। আহত হয়েছেন একই গ্রামের সারং উদ্দিনের ছেলে ইমাম উদ্দিন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকারে করে বলেছেন, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা লাশ দুটি উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসন লাশ সিলেটে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে চাইলে আত্মীয় ও এলাকাবাসী আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে আসা এক শ্রমিক জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির বগাইয়া নদীতে ১২৬৩ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাথর উত্তোলন করতে যায় তিন শ্রমিক। এ সময় বিএসএফ ও ভারতীয় খাসিয়ারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই দু’জন বাংলাদেশী শ্রমিক মারা যায়। একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। পালিয়ে আসা আহত শ্রমিক গ্রামবাসীদের ঘটনা জানালে লাশের সন্ধানে গ্রামের মানুষ ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশের সন্ধান করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোর ৬টায় একজন এবং সকাল ৯টায় আরও একজনের লাশের সন্ধান পান তারা। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিলেট সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আজম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ধ্যার পর কোয়ারি এলাকায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও এসব শ্রমিক রাতের আঁধারে সেখানে গিয়েছিল। তিনি জানান, বিজিবি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বিএসএফ’র সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গত সন্ধ্যায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি ইউনুছ মিয়া জানান, ভোর সাড়ে ৪টায় ১২৬৩ সীমানা পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোয়ারি এলাকার বগাই নদীতে নৌকাযোগে পাথর উত্তোলন করতে যান কয়েকজন বাংলাদেশী। এ সময় ভারতীয়রা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওসি আরও জানান, আত্মীয় ও এলাকাবাসীর দাবির কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিকাল ৫টায় বিছনাকান্দি জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সিলেট ৪-আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, বিএসএফ’র গুলিতে পাথর শ্রমিক নিহত হওয়া আবারও ভারত জাতীয় বেইমানির পরিচয় দিল। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি-চিদাম্বরম বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন সীমান্তের লোকজনের ওপর আর কোনো গুলি চালাবে না ভারত, এতে প্রমাণ হয় ভারত তার দৃষ্টিভঙ্গি বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করেনি।
এ ব্যাপারে গেয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, তিনি ঘটনার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ঘটনার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি, নিহতের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য আবেদন জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফনের সুযোগ দিয়েছি।
ইলিয়াস আলীর প্রতিবাদ : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনিপর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী এক বিবৃতিতে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে দু’জন নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হওয়ায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একের পর এক হামলা চালিয়ে নিরীহ বাংলাদেশীদের অব্যাহতভাবে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। ভারতের সেবাদাস এ সরকার এসব হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হামলা এবং জমি দখলের প্রচেষ্টার ন্যূনতম কোনো প্রতিবাদ করছে না। সীমান্তে যৌথ জরিপের নামে একতরফাভাবে বাংলাদেশের জনগণের বসতভিটা ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত করছে। এরই মধ্যে সরকার পাদুয়া, বিবির হাওড় ও বিছনাকান্দিসহ সীমান্তে একতরফা জরিপ করে যাচ্ছে। সরকার ভারতীয়দের নীল নকশানুযায়ী সীমান্তে জরিপ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁবেদার শেখ হাসিনা সরকার একদিকে বাংলাদেশের ভূমি প্রহসনের জরিপের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে। অপরদিকে ভারতীয়রা সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি সীমান্ত আজ অরক্ষিত। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/08/13/98971

Friday 5 August 2011

সৌদি আরব থেকে ফেরত আসছে ১০ লাখ বাংলাদেশী : বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ভারতের

সৈয়দ মিজানুর রহমান সৌদি আরব থেকে
আকামা (ওয়ার্কপারমিট) পরিবর্তন জটিলতার কারণে সৌদি আরব থেকে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ হয়ে যাওয়ায় এসব বাংলাদেশীর জেল-জরিমানা ও পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়েছে।
সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্ধেক প্রবাসী বাংলাদেশীই এখন অবৈধ। কারণ গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের ওয়ার্কপারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় বছর আগে সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি সৌদি আরব সফর করে এ বিষয়ে তেমন কোনো উলেল্গখযোগ্য সাড়া পাননি বলে জানা গেছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে যান বলেও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রুমি সাঈদ জানান।
জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় সৌদি আরবের ছোট-বড় বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশীরা বেকার হয়ে পড়ে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠে এবং বহু নতুন কোম্পানি চালু হয়। বেকার এসব বাংলাদেশী ওইসব কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় আকামা পরিবর্তন নিয়ে।
সৌদি সরকার গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন পুরোপুরি বন্ধ রাখায় নতুন নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব বাংলাদেশীকে বৈধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু সৌদি স্পন্সর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বহু বাংলাদেশী প্রবাসীকে সৌদি আরবে আকামা দেয়। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাগজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নবায়ন বন্ধ করে দেয়। যার ফলে তাদের অধীনে আসা বাংলাদেশীরা পড়ে বিপাকে।
কথা হয় আভায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক হাসান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু তার আকামা পরিবর্তন হয়নি। কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। কিন্তু আকামা না হওয়ায় তার দেশে ফেরা বা এখানে থাকা দুটিই অনিশ্চিত। যে কোনো মুহূর্তে সৌদি পুলিশ অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
রিয়াদের একটি শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী নাগরিক কবির হোসেন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবের বিভিন্ন কেম্প্পানিতে নিয়োজিত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী এখন অবৈধ। আকামা বদল না হওয়ায় এদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। অথচ এদের অনেকেরই এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে আসার খরচই ওঠেনি। এদের অধিকাংশই গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাগ্য বদলের আশায় এখানে এসেছিলেন।
মদিনায় গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ মদিনা শাখার সভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা আমাদের এ চরম ভোগান্তির কারণ। তিনি জানান, তার মতো আরও লাখ লাখ বাংলাদেশী চরম অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যে এখানে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদেশিদের জন্য সৌদি আরবে আকামার মেয়াদ থাকে ৩ থেকে ৫ বছর। এর মধ্যেই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অন্য সব দেশের জন্যই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের দরজা খোলা রয়েছে। ওইসব দেশের নাগরিকদের কোনো ভোগান্তিও নেই। কিন্তু ২০০৭ সালে হঠাত্ করেই বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর আশ্বাস পাওয়া গেছে চালুর। কিন্তু চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে তা আর হচ্ছে না।
বর্তমানে জেদ্দায় অবস্থানরত গেল্গাবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম অভিযোগ করেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশের ভাব-মর্যাদা উন্নয়নে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার। তিনি আরও জানান, সৌদি আরবে ভারতের একটি নিজস্ব পত্রিকা রয়েছে। তাছাড়া ভারতের প্রায় সবক’টি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সৌদি আরবের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অতি সহজেই ভারত তাদের নিজেদের ইমেজ তৈরি এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার দখল করা। আর এতে বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয় শ্রমিকরা।