Tuesday 26 February 2013

পুলিশের নির্বিচারে আলেম হত্যা : স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল, সিংগাইরে গুলিতে মহিলাসহ নিহত ৫ আজ মানিকগঞ্জে হরতাল, সারাদেশে বিক্ষোভ ও নফল রোজা ইসলামীদলগুলোর ডাকা হরতালে মানিকগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আলেম ও মহিলাসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। নিহতরা খেলাফত মজলিস, ছাত্রমজলিস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মী। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ মানিকগঞ্জ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল এবং সারাদেশে বিক্ষোভ ও নফল রোজা রাখা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী দলগুলো। বিএনপি এ হরতালে সমর্থন জানিয়েছে। হরতাল চলাকালে বগুড়ায় পিকেটার দেখামাত্রই গুলি চালায় পুলিশ। সেখানে ২০ জন আহত হয়। এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশে সাঁজোয়া যান নিয়ে মারমুখী অবস্থানে ছিল সশস্ত্র র্যাব ও পুলিশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয় বিজিবি। ইসলামী দলগুলোর অফিস, বিভিন্ন মাদরাসা ও মসজিদ সকাল থেকেই ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ। ফুটপাতের দোকান খুলতে দেয়নি তারা। পাঞ্জাবি-টুপি পরা লোক দেখলেই ধাওয়া করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ কড়া অবস্থানের কারণে সারাদেশে তেমন কোনো পিকেটিং ও মিছিল করতে পারেনি হরতাল সমর্থকরা। তবে কিছু জায়গায় ঝটিকা মিছিল করে তারা। এ সময় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হরতালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকালে একটি লেগুনায় আগুন ও ধানমন্ডিতে গাড়ি ভাংচুর করে পিকেটাররা। হরতালের সমর্থনে কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় ইসলামী দলগুলোর মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে নাস্তিক ব্লগারদের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় বিক্ষুব্ধরা কর্মীরা। এছাড়া রাজধানীর পল্টন, ফকিরাপুল ও মহাখালী এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ হয়। মতিঝিল ও বিজয়নগরসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। অপরদিকে হরতাল প্রতিরোধে লাঠি হাতে মিছিল-স্লোগানে সরব ছিল সরকারদলীয় ও শাহবাগের আন্দোলনকারীরা। এ সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ট্রেন অবরোধ করে রাখে মুসল্লিরা। এ সময় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। চাঁদপুরেও দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এদিকে হরতালবিরোধী মিছিল থেকে হরিণাকুণ্ড, ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের অফিসে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। ইসলামী ব্যাংকের পল্টন, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা, রূপগঞ্জ, নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন শাখায়ও হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এদিকে পিকেটিং ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্ত হরতালে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানীসহ সারাদেশ। রাজধানীতে সকাল থেকে কিছু লোকাল বাস, সিএনজি ও রিকশা ছাড়া যান চলাচল ছিল খুবই কম। কোনো প্রাইভেট গাড়ি চলেনি। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। এমনকি বাসের কাউন্টারও খোলেনি। বড় বড় মার্কেট, বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট ছিল বন্ধ। ব্যাংক বীমা খোলা থাকলেও প্রধান গেট ছিল বন্ধ। অজানা আতঙ্কে অফিস ও জরুরি কাজ ছাড়ায় রাস্তায় বের হয়নি সাধারণ মানুষ। হরতাল সমর্থকদের পক্ষ থেকে কোনো ভাংচুর বা বাধা না থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়। হরতালের কারণে এসএসসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইবির ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ইসলমী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র বন্ধ এবং গত শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বেপরোয়া হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই হরতালের ঘোষণা দেয় বেশ কয়েকটি ইসলামী দল। গত শনিবার খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। একই দাবিতে কাল সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন তিনি। দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম ও চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকেও পৃথকভাবে রোববার হরতাল কর্মসূচি দেয়া হয়। হরতাল আহ্বানকারী দলগুলো হচ্ছে—খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে ইসলামী, ওলামা কমিটি প্রভৃতি। এদিকে আলেমদের ডাকা হরতালে সমর্থন দেয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ১৮ দলীয় জোটের অন্য শরিকসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন। তবে এসব দল হরতালের সমর্থনে কোনো মিছিল বা পিকেটিং করেনি। হরতালে নৈতিক সমর্থন দিলেও মাঠে ছিল না বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। নেতাকর্মীরা কেউ কেউ কার্যালয়ে এলেও হরতালের পক্ষে কোনো তত্পরতা ছিল না। মানিকগঞ্জে হরতাল সমর্থক-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষ : পুলিশের গুলিতে নিহত ৫, শিশুসহ গুলিবিদ্ধ ২০, আজ জেলাব্যাপী হরতাল : মানিকগঞ্জ ও সিংগাইর প্রতিনিধি জানান, সিংগাইরে গতকাল ইসলামী সমমনা দলগুলোর হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থনকারী, গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবর্ষণ টিয়ারশেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের গুলিতে মাদরাসা শিক্ষকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছে শিশুসহ ২০ জন। দু’পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও থানার ওসিসহ ৩ পুলিশ আহত হয়েছে । প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানায়, গতকাল সকাল ৯টার দিকে রাস্তা অবরোধ করা নিয়ে কাশিমনগর বাসস্ট্যান্ডে হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ খানের তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে তারা। এ খবর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে জড়ো হয়ে তারা সদর বিএনপির কার্যালয়সহ ইসলামী সমমনা দলের সমর্থনকারীদের মারধরসহ দুটি দোকান ভাংচুর করে। এ খবরে সকাল এগারোটার দিকে হরতাল সমর্থনকারীরা গোবিন্দল বাসস্ট্যান্ড নতুন বাজারে সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের সঙ্গে এএসপি সদর সার্কেল মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে যোগ দেয় অতিরিক্ত পুলিশ। সংঘর্ষ বাধে পুলিশ ও হরতাল সমর্থনকারীদের মধ্যে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে বসতবাড়ির টিনের বেড়া ভেদ করে প্রবাসীর স্ত্রী হেলেনা আহত হন। এতে হরতাল সমর্থনকারী ও গ্রামবাসী চারদিক থেকে পুলিশকে ঘেরাও করে। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ডিবি সদস্য মুজিবর ও পুলিশ কনস্টেবল শাহিন আহত হন। এ সময় পুলিশ ব্যাপক গুলিবর্ষণ করলে গোবিন্দল মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ শাহ আলম (২৫), নাজিম উদ্দিন (২৬), আলমগীর (২৫), হেলেনা (২২) ও মাওলানা নাসির উদ্দিন (৩০) নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় আলী আকবর, লিংকন, নোয়াব আলী, সিদ্দিক, নাজিম উদ্দিন, কালু, দুলাল মিয়া, আলমাস, মানিক, মামুন, আনোয়ার, ওয়াজেদ, শাহিন, রুবেল, রউফ ও শিশু লিটন। নিহত-আহতরা সবাই গোবিন্দল গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে নাজিমউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বাকিরা খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মী বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. খলিলুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে হরতাল সমর্থনকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লিয়াকত আলী। সে সঙ্গে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে এসআই আদিল মাহমুদ ও এসআই এমদাদুল হকের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল। পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। খেলাফত মজলিসসহ ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে আজ মানিকগঞ্জ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুজ্জামান ও র্যাব ৪-এর কমান্ডিং অফিসার কিসমত হায়াত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে সিংগাইরে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নাজিমুদ্দিনসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল ৫টায় বিএনপি কার্যালয় থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। এতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান, আতাউর রহমান আতা, মোতালেব হোসেন প্রমুখ । মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া দাবি করেন, জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা হরতালের নামে দোকানপাট ভাংচুর ও রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে হরতালকারীরা পুলিশের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জীবন রক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং ৩০০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৭ জন হরতাল সমর্থনকারীকে আটক করা হয়েছে। রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর-পুরান ঢাকা : গতকাল কামরাঙ্গীর চর এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। প্রতিদিনের তুলনায় গতকাল ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল অনেক কম ছিল। তবে পুলিশ ও র্যাব ফজরের নামাজের পর থেকেই জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া হাফেজ্জী হুজুরের মাদরাসার সামনে অবস্থান নেয়। মাদরাসার আশপাশ এলাকায় ২-৩ জনের বেশি একত্রিত হতে দেয়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদরাসা থেকে একটি মিছিল বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পুলিশ আগেই মিছিল বের না করার কড়া নির্দেশ দিয়ে যায়। পরে মিছিলটি মাদরাসার ভিতরে প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজকের (রোববার) হরতাল বেঈমানদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের হরতাল। যারা এই হরতালের বিরোধিতা করেছে তারা সবাই নাস্তিক। আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিরুদ্ধে যারা কটূক্তি করেছে তারা মানুষ নয়, তারা বেঈমান পশু। আর যারা তাদের সমর্থন করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একজন সত্যের সৈনিক। কোনো নাস্তিক-মুরতাদ আমার দেশ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা জনগণ আমার দেশ-এর পাশে আছি, থাকব। খেলাফত আন্দোলনের আমির হজরত মাওলানা শাহ আহম্মদুল্লাহ আশরাফ বলেন, এই হরতাল ডাকা হয়েছে নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে। এই হরতাল মারামারি-কাটাকাটি করার জন্য নয়। আমরা কোনো সংঘাতে যাব না। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল করবো। দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, এই হরতালে সারা দেশবাসী সমর্থন দিয়েছে। এই হরতাল কোনো সরকারের বিরুদ্ধে নয়। ব্লগারদের পক্ষ নেয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাওবা করতে হবে। এই আন্দোলনকে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন বলে কিছু মিডিয়ার প্রচারণার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এই হরতাল হচ্ছে ইসলামি সমমনা ৮ দলের হরতাল। কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবু জাফর কাশেমী গ্রেফতার করা তাঁতীবাজার মাদরাসার ছাত্রদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। সমাবেশ শেষে মাদরাসার মাঠে ব্লগার নাস্তিক ও মুরতাদদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এদিকে সকাল থেকে পুরান ঢাকায় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গুলিস্তান, কাপ্তান বাজার, নবাবপুর, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, বংশাল, সদরঘাট, নয়াবাজার, বাবুবাজার, মিটফোর্ড রোড, চকবাজার, পোস্তা, লালবাগ, আজিমপুর, হাজারীবাগ এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটগুলো বন্ধ ছিল। রাস্তায় সিএনজি, টেম্পো চলাচল ছিল। কিন্তু প্রাইভেট কার দেখা যায়নি। রিকশা চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী : গতকালের হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মানিকনগর, ডেমরা, ধোলাইরপাড়, ধলপুর, কাজলাসহ আশপাশের এলাকায়। এসব এলাকার খাবার হোটেল ও ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার বাইরে থেকে একটি বাসও টার্মিনালে আসেনি। যাত্রবাড়ি থেকে মিরপুর ও গাবতলী রুটে কয়েকটি শিকড় ও ৮ নম্বর বাস আসা যাওয়া করেছে। তবে এগুলোর কোনো কোনোটিতে ৮/১০ জন যাত্রী ছিল। কোনটিতে আদৌ কোনো যাত্রী ছিল না। সকাল ১০টায় যাত্রবাড়ি চৌরাস্তায় টিভি ক্যামেরাম্যানদের অনুরোধে স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকটি খালি বাস কয়েকবার যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ এলাকা ঘোরাতে বাধ্য করে। প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চোখে পড়েনি। সকালের দিকে বেশ কিছু রিকশা চলেছে। তবে দুপুরের দিকে যাত্রী না থাকায় রিকশা চলাচলও কমে আসে। সকালের দিকে ধোলাইরপাড়, কাজলা ও ধলপুরে হরতালের পক্ষে মিছিল হয়। ধলপুরে একটি টেম্পোতে আগুন দেয়া হয়। ধোলাইরপাড় থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল যাত্রাবাড়ির দিকে এগোনোর কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের বাধায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পিকেটারা একটি বাস ও একটি টেম্পো ভাংচুর করে। যাত্রাবাড়িতে হরতাল প্রতিরোধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির উপস্থিতিতে হকিস্টিক নিয়ে মিছিল করে। দুপুর পর্যন্ত যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তায় পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি অবস্থান করে তারা। হরতালে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ও গুলশানের চিত্র : ইসলামি দলগুলোর হরতালে গতকাল মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ও গুলশানে কোনো সহিংসতা হয়নি। মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে দুটি ঝটিকা মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। ধানমন্ডিতে সকাল ৭টার দিকে মিছিল বের করে সমমনা ইসলামি দল। গাবতলী ও মহাখালী থেকে অতি ভোরে ৪/৫টি দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে গেলেও তা ছিল যাত্রীশূন্য। তবে সাড়ে ৬টার পর দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। মিরপুর এলাকায় কোনো সংঘর্ষ না হলেও মিরপুর এক নম্বরের দিকে ঝটিকা মিছিল করেছে। তবে পুরো ঢাকায় গতকাল পুলিশ ও র্যাব নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। সর্বদা বন্দুক তাক করে তারা টহল দিয়েছে। র্যাব-পুলিশের সংখ্যা ছিল অন্য হরতালের চেয়ে অনেক বেশি। এতে প্রতিটি এলাকায় অফিসগামী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। বাড়তি আতঙ্ক ছড়ায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের লাঠি-রডের মহড়া ও হরতালবিরোধী মিছিল। থেমে থেমে রাজধানীর সব স্ট্যান্ডে তারা মিছিল করেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে জমায়েত হয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল করে। স্থানীয় এমপি কামাল মজুমদারের নেতৃত্বে লাঠি মিছিল করে তারা। মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও ও মগবাজার : হরতাল প্রতিরোধে মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও এবং মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর অবস্থানে ছিল র্যাব ও পুলিশ। এসব এলাকায় তেমন কোনো পিকেটিং দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মতিঝিল কমলাপুর থেকে জসিমউদ্দিন সড়কে ঝটিকা মিছিল করে সমমনা ১২ দল। দুপুরের দিকে পল্টন তোপখানা রোডে একটি ককটেল বিস্ফোরণের খবরে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেখানে কোনো পিকেটিং বা মিছিল হয়নি। ১০টার দিকে হরতালবিরোধী একটি মিছিল থেকে পল্টন মোড়ে ইসলামি ব্যাংকের সাইনবোর্ডে ঢিল ছোড়া হয়। সকাল ৮টার দিকে খিলগাঁও শাহজাহানপুরে পিকেটিং করে ইসলামি দলের কিছু কর্মী। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। একই সময়ে উত্তর শাহজাহানপুর মাদরাসার পাশে কিছু ছাত্র জড়ো হলে পুলিশ তাদেরও ধাওয়া দেয়। মগবাজার, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় লাঠিহাতে হরতালবিরোধী মিছিল বের হয়। হরতাল সফলে অভিনন্দন ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা : ইসলামি দলগুলোর ডাকা হরতাল স্বতঃস্ফর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে সফল করায় সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ। হরতাল শেষে বিকালে কামরঙ্গীরচর মাদরাসায় আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি হরতাল চলাকালে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে মানিকগঞ্জে ৫ জন নিহত এবং সারাদেশে নেতাকর্মী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ মানিকগঞ্জ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, সারাদেশে বিক্ষোভ পালন, সব শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া এবং রোজা রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মসজিদে মসজিদে কুনুতে নাযেলা পড়ে দোয়া অব্যাহত রাখার জন্যও ইমামদের প্রতি আহ্বান এবং ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের ইসলামবিরোধী তত্পরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সারাদেশে গণসংযোগ করার জন্য আলেম-ওলামা, নেতাকর্মী ও নবীপ্রেমিকদের প্রতি আহ্বান জানান। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান এবং খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানসহ এই আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত সবার নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে ১ মার্চ বাদজুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও দোয়া দিবস পালন করা হবে। নেতারা জানান, ওইদিনের বিক্ষোভ শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বিশ্বনবীর (সা.) প্রেমিকরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, কিছু পত্রিকা ও ইলেট্রনিক মিডিয়ায় নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার বন্ধ না করলে ১ মার্চ থেকে তাদের এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পণ্য বর্জন করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হবে। এদিকে হরতাল সফল করায় বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
বৃদ্ধের দাড়ি ধরে টানা সেই ছাত্রলীগ ক্যাডারও লগি-বৈঠার খুনি স্টাফ রিপোর্টার মোফাচ্ছেরে কোরআন ও আলেমদের ডাকা কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলকারী ক্যাডারদের একজন শাহরিয়ার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে পুলিশ বেষ্টনীতে এক বৃদ্ধের দাড়ি ধরে টানাহেঁচড়া করে কিলঘুষি মারতে দেখা যায়। কিছু মিডিয়ায় ‘জনতার গণপিটুনি’ বলে রাজপথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসকে বৈধতা দিলেও আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ছাত্রলীগ ক্যাডার শাহরিয়ার (২৮) একজন চিহ্নিত খুনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে মানুষ মেরে উল্লাসকারীদের অন্যতম সে। ওইদিন নিহত শহীদের পরিবার ছাড়াও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আমার দেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা শাহরিয়ার নিজেও এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করে। এর আগে শাহবাগের কথিত ব্লগারদের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাপ্পাদিত্য বসু ২৮ অক্টোবরের ভয়ঙ্কর খুনি বলে আমার দেশ-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। শাহরিয়ার রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো-কদমতলা-রাজারবাগ অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজের শিক্ষাজীবন অষ্টম শ্রেণীতে শেষ হলেও এখন সে আলোচিত ব্লগার ও ছাত্রনেতা। শাহবাগ আন্দোলনে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রলীগের নেতৃত্বদানকারী। আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় অছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ার মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পদবিধারী নেতাও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। এলাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে জুয়ার আড্ডা বসায়। তার কথা না শুনলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। সম্প্রতি রাজারবাগ পানির পাম্প সংলগ্ন এলাকায় জমি দখল করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার ধাওয়া খেয়ে দলবলসহ পালিয়ে আসতে হয় শাহরিয়ারকে। চাঁদাবাজির অভিযোগে এ সরকারের আমলেই র্যাব তাকে একবার গ্রেফতার করেছিল। পরে ওপর মহলের তদবিরে ছেড়ে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগে মামলা নেয় না সবুজবাগ থানা পুলিশ। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাহরিয়ার। তবে ২৮ অক্টোবর পল্টনে সক্রিয় ছিল জানিয়ে এ প্রতিবেদককে সে জানায়, ‘ওইদিন মাঠে ছিলাম। এ ঘটনায় মামলা হইছে, মারও খাইছি। তো তাতে কি হয়েছে।’ তবে সবুজবাগ থানা পুলিশ বলেছে, তারা শাহরিয়ারের ২৮ অক্টোবরের মারামারিতে জড়িত থাকা বা চাঁদাবাজির বিষয়ে কিছুই জানে না। তাদের দাবি, ‘সে খুবই ভালো লোক’। ১৩ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে বায়তুল মোকাররমের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘মাওলানা সাঈদী মুক্তিমঞ্চ’। সেদিন ভোরেই বায়তুল মোকাররম, মতিঝিলসহ পুরো এলাকা দখলে নেয় র্যাব ও পুলিশ। সকালে পুলিশ পাহারায় মাওলানা সাঈদীর মুক্তি দাবিতে রাজপথে নামা আলেম, জনতা ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের ব্যাপক মারধর করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। অনেক নিরীহ পথচারীও বর্বর হামলার শিকার হন। সেদিন পুলিশের বেষ্টনীতে থাকা একজন বৃদ্ধ পথচারীর সাদা দাড়ি টেনে ধরে তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারে অছাত্র ছাত্রলীগ ক্যাডার শাহরিয়ার। কিছু আওয়ামীপন্থী গণমাধ্যমে এসব হামলাকে ‘জনতার হামলা’ বলে বৈধতা দেয়ার প্রয়াস চালানো হয়। তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে শাহরিয়ার মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক। ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার চিহ্নিত এ খুনির বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। কে এই ব্লগারবেশী শাহরিয়ার : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে মানুষ হত্যার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ওইদিনের হামলায় নিহত হন ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিবির নেতা হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন ও সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম। এ দুই শহীদের স্বজনরা ছাত্রলীগ নেতা মুস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ার ২৮ অক্টোবর সশস্ত্র হালাকারীদের একজন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন। তারা জানান, একই এলাকার হওয়ায় মাসুম ও শিপনের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল শাহরিয়ারের। সেই শাহরিয়ারই ওইদিন মানুষ খুনে নেতৃত্ব দেয়। তবে তারা শাহরিয়ারের ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘটনার পরদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করে একটি হত্যা মামলা (মামলা নং-৬১ (২৯/১০/০৬) হয়। সে মামলার একজন আসামি শাহরিয়ার। এছাড়া শহীদ মাসুম-শিপন স্মৃতি সংসদের পক্ষে বের করা ‘শাহাদাত দেবে মুক্তি’ শীর্ষক বুকলেটে লালবৃত্তে চিহ্নিত করা আছে শাহরিয়ারের ছবি। ছবির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে—‘২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টন মোড়ে এভাবেই এক শিবির কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় কদমতলা-রাজারবাগ এলাকার সন্ত্রাসী ২৮ নং ওয়ার্ড (বর্তমান ৫ নং ওয়ার্ড) ছাত্রলীগ কর্মী শাহরিয়ার।’ এর বাইরে ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বুকলেট ও পত্রিকায় শাহরিয়ারের ছবি রয়েছে। বাসাবো-রাজারবাগ এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর মানুষ খুনের প্রতিদান হিসেবে ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয় শাহরিয়ারকে। পরে ২০১১ সালে সরকার দলীয় এমপি সাবের হোসেনের আশীর্বাদে ওয়ার্ড সভাপতি থেকে সরাসরি মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক হন। এলাকায় তাকে মদত দেয় ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চিত্তরঞ্জন দাশ। ওই এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ান তিনি। রমজানে দলের ইফতারের টাকা মেরে খাওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার সতুরা শরীফে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় ভাই হিরু এলাকার সন্ত্রাসী এবং বোমা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি। এলাকাবাসী জানায়, রাজারবাগ বাজারে জেরিন মার্কেটে একটি ক্লাব রয়েছে তার, যেখানে প্রতিদিন প্রকাশ্যে জুয়া খেলা চলে। এ জায়গাটি এলাকাবাসীর কাছে মাদকের আখড়া বলে পরিচিত। এখানেই বসে সন্ত্রাসীদের আড্ডা। পুলিশের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও পুলিশ অনেকটা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবুজর গিফারী কলেজের ক্যান্টিনটি নিজের দখলে নেন তিনি। নিম্নমানের খাবার দিয়ে অতিরিক্ত মূল্য নিলেও শিক্ষার্থীরা এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সবুজবাগ থানা পুলিশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে শাহরিয়ারের। পুলিশের যোগসাজশেই তিনি এসব অপকর্ম করে বেড়ান। তাই পুলিশের ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না। গত চার বছরে বিরোধী বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ দিয়ে নাজেহাল করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিশেষ করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ নিয়ে হানা দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেন। জানতে চাইলে মুস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ার বলেন, দল শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। তাই আমরা গিয়েছি। আমি মূলত ক্রিকেট খেলি। আওয়ামী লীগ ভালো লাগে তাই করি। কোনো রকমের চাঁদাবাািজর সঙ্গে আমি জড়িত নই। দল করে বড় কোনো নেতা হওয়ার খায়েশও নেই। ২৮ অক্টোবর পল্টনে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কর্মীদের মধ্যে হওয়া মারামারিতে অংশ নিয়েছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, ওইদিন মারামারিতে ছিলাম। মামলা হইছে, জেল খাটছি। মাইর খাইছি। ‘আপনি তো ছাত্র না, তারপরও কীভাবে ছাত্রলীগের নেতা’—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে আমার সিভি দেয়া আছে। দেখে নেবেন আমি ছাত্র কি-না। তিনি বলেন, ‘অভয় বিনোদনী স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি আমি। পরে অন্য স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করি।’ কোন স্কুল থেকে পাস করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলতে পারব না। আপনি দেখি আমার অনেক কিছুই খুঁজে বের করেছেন। এটাও জেনে নিন, পাবেন। এ বিষয়ে সবুজবাগ থানার ওসি বাবুল মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অপারেশন অফিসার আহসান হাবিব খান বলেন, তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। আমি তো জানি সে খুবই ভালো লোক। আমি শুধু তার রাজনৈতিক বিষয়গুলো জানি। তিনি বলেন, আমার জানা মতে তিনি ভালো। ক্লাবে জুয়ার আড্ডা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ক্লাবে কিছু হয় কিনা জানি না। আমি নিজে কখনও ক্লাবে যাই না। অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে দেখব। আপনি ওসি সাহেবকেও ব্যাপারটা জানান।

Sunday 1 January 2012

ইনশাল্লাহ বলায় জিএমজি’র এয়ার হোস্টেসকে ক্ষমা চাইতে হলো













কাদের গনি চৌধুরী
বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্সে ‘ইনশাল্লাহ’ ও ভ্রমণের দোয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ‘ইনশাল্লাহ’ বলায় সিনিয়র এক এয়ার হোস্টেসের চাকরি যায় যায় অবস্থা। ওই এয়ার হোস্টেসকে এর জন্য শোকজ করা হয়েছে। লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে তিনি চাকরিচ্যুতি থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছেন। অন্যদেরও চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন জিএমজির ভারতীয় কর্মকর্তা এওয়ার্ড একলেসটন। এদিকে ‘ইনশাল্লাহ’ ও ভ্রমণের দোয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশী যাত্রীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জিএমজির সব ফ্লাইটে ‘ইনশাল্লাহ’ এবং ভ্রমণের দোয়া ‘বিসমিল্লাহে মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বিলা গাফুরুর রাহিম’ পাঠ নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো জিএমজির ফ্লাইট যাত্রা শুরু এবং ল্যান্ড করার আগে ভ্রমণের দোয়া ও ‘ইনশাল্লাহ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা যাত্রা শুরু করছি’ এসব ঘোষণা থাকত। কিন্তু একচেটিয়া ভারতীয় কর্মকর্তা নিয়োগের পর আল্লাহর নামে যাত্রা শুরু করার ঘোষণা নিষিদ্ধ করার মতো ধৃষ্টতা দেখালো জিএমজি। ফলে শুধু যাত্রীই নয়, তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জিএমজির বাংলাদেশী অফিসারদের মধ্যেও।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৭ নভেম্বর দুবাই থেকে জিএমজির একটি ফ্লাইট ঢাকায় আসছিল। ওই ফ্লাইটের ঘোষণার দায়িত্বে ছিলেন পার্সার সাবেরা ফেরদৌসী। বরাবরের মতো তিনি ওইদিনও ঘোষণা করেন ‘ইনশাল্লাহ’ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ঢাকা হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করব। ওই ফ্লাইটে ছিলেন জিএমজির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ভারতীয় নাগরিক এওয়ার্ড একলেসটন। এ ঘোষণা শোনার পর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন তিনি। ঢাকায় ফিরে ১ ডিসেম্বর তিনি শোকজ করেন পার্সার সাবেরা ফেরদৌসীকে। শোকজ লেটারে বলা হয়, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মারুফা মাহফুজ আপনাকে আপডেট ঘোষণা ব্রিফ করার পরও আপনি আগের ঘোষণা পাঠ করেছেন। এতে আপনার উদাসীনতার প্রমাণ মেলে যা শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত অপরাধ।
অবশ্য চিঠিতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে অতীতের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর শোকজের জবাব দেন সাবেরা ফেরদৌসী। জবাবে তিনি তার ঘোষণায় আগের মতো ইনশাল্লাহ বলায় আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। তিনি এ ধরনের ভুল আর করবেন না বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
শুধু সাবেরা ফেরদৌসীই নন, আরও বেশ ক’জন এয়ার হোস্টেসকে ইনশাল্লাহ বলায় জিএমজি কর্তৃপক্ষের বকুনি খেতে হয়েছে। জিএমজির ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর ফারহানা জুলি ঘোষণায় যেন ‘ইনশাল্লাহ’ ও ভ্রমণের দোয়া পাঠ করা না হয়, সেজন্য সব কেবিন ক্রুকে মেসেজ পাঠিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর ফারহানা জুলির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু কলকাতার ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নিয়ম করা হয়েছে, অন্য ফ্লাইটে ঠিক আছে। কলকাতা যেতে অল্প সময় লাগে, তাই এত বড় ঘোষণা দিলে অনেকে বিরক্ত হন। তাহলে দুবাই থেকে আসা ফ্লাইটে ‘ইনশাল্লাহ’ ও ভ্রমণের দোয়া পাঠ করায় কেন শোকজ করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ঠিক নয়। সাবেরা ফেরদৌসী গতকালও ফ্লাই করেছেন। আপনার কথা শুনে আমি আশ্চর্য হচ্ছি।
জিএমজির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এওয়ার্ড একলেসটন এবং পার্সার সাবেরা ফেরদৌসীর বক্তব্য জানার জন্য ফোন করে তাদের পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্স লিমিটেডের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে আছে ভারতীয়রা। ফলে বাংলাদেশী দক্ষ কর্মকর্তারা বেকার ও পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন। জিএমজির একটি সূত্র জানায়, শীর্ষ ১৬ পদের মধ্যে ৯টি পদই ভারতীয়দের দখলে। বাকি দুটিতে আমেরিকান, একটিতে ব্রিটিশ, একটিতে শ্রীলঙ্কান, একটিতে ফিলিপিনো এবং দুটিতে বাংলাদেশী কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব বিদেশি কর্মকর্তাদের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে জিএমজি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে। আর এভাবে দেশের অর্থ চলে যাচ্ছে বিদেশে।
জিএমজির প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন ভারতীয় নাগরিক সঞ্জীব কাপুর। এখানে দায়িত্বভার গ্রহণ করার আগে তিনি ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানিতে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি তেমাসেক হোল্ডিংসের (সিঙ্গাপুর) ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পোর্টফোলিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইন্সে স্ট্র্যাটেজি, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন্সের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডাইরেক্টর কমার্শিয়াল হিসেবে জিএমজি নিয়োগ করেছে ভারতীয় নাগরিক শিল্পা ভাটিয়াকে। কমার্শিয়াল বিষয়ে শিল্পার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেয় জিএমজি। এছাড়া ডাইরেক্টর ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে ভারতীয় নাগরিক বারিন ঘোষ দাস্তিদার, ডাইরেক্টর গ্রাউন্ড সার্ভিস পদে শাইলেস শর্মা, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কেবিন সার্ভিস পদে এওয়ার্ড একলেসটন, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ক্যাটারিং পদে রাজিব ঘাই, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার অপারেশন্স নাইডু, এজিএম অপারেশন্স বন্দনা, ডাইরেক্টর সেফটি পদে আরএল কাপুরকে নিয়োগ দিয়েছে জিএমজি। এদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব আরএল কাপুর ভারতে চাকরি জীবন শেষে অবসর কাটাচ্ছিলেন। তাকে মোটা বেতনে চাকরি দেয় জিএমজি। এওয়ার্ড একলেসটনকে জিএমজি ৭ হাজার ডলার অর্থাত্ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বেতন দিচ্ছেন। অথচ জিএমজিতে চাকরির আগে তিনি জেড এয়ারওয়েজের কলকাতা অফিসের রিক্রুটার ছিলেন। কেবিন সার্ভিসে পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কেবিন সার্ভিস পদে নিয়োগ দেয় সংস্থাটি।
জিএমজির দ্বিতীয় প্রধান পদ চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিডকে। ডাইরেক্টর ফ্লাইট অপারেটর (ডিএফও) পদে আমেরিকান নাগরিক জ্যাক একেল ও জেনারেল ম্যানেজার প্ল্যানিং পদে জেনিস, জেনারেল ম্যানেজার কোয়ালিটি পদে ফিলিপিনো ডার্ক এবং জিএম কার্গো পদে শ্রীলঙ্কান অরুণাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদেশি কর্মকর্তারা একজোট হয়ে যে ক’জন বাংলাদেশী কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। তারা কর্তৃপক্ষকে সবসময় বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ভুল বোঝান। সূত্র জানায়, বোয়িং ৭৬৭-এর জন্য ৮ জন বাংলাদেশী পাইলট সুইডেন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন ৪ সেপ্টেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী এরপর তাদের বাংলাদেশ লাইনে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। অথচ ডিএফও জ্যাক এই ট্রেনিং স্লো চালিয়ে তাদের কাজে যোগদান থেকে দূরে রাখছেন। সূত্র জানায়, বিদেশি পাইলটদের দিয়ে এয়ারক্রাফট চালানোর জন্য তিনি এমন চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। এতে দেশের প্রচুর অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশী একজন পাইলটকে যেখানে ৫ হাজার ডলার বেতন দেয়া হয়, সেখানে বিদেশি একজন পাইলটকে দিতে হয় ১৪ হাজার ডলার।
বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বেক্সিমকোর মালিকানাধীন কোম্পানি জিএমজি এয়ারলাইন্স ১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৪-এর ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বিমান আকাশে পদচারণা শুরু হয় জিএমজির। আটটি আন্তর্জাতিক এবং পাঁচটি অভ্যন্তরীণ রুটে সপ্তাহে ২৩৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে জিএমজি এয়ারলাইন্স। জিএমজি আন্তর্জাতিক রুট কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কলকাতা, দুবাই, আবুধাবি, জেদ্দা ও রিয়াদ এবং অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট এবং যশোরে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। জিএমজি বর্তমানে তিনটি বোয়িং ৭৬৭ ও তিনটি ম্যাকডগলাস এয়ারক্রাফট আঞ্চলিক রুটে এবং তিনটি কানাডিয়ান বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ-৮ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে কিছুদিন ধরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে তারা।
সূত্র জানায়, বিদেশিদের মোটা অংকের বেতন দিতে গিয়ে এবং পরিকল্পনার অভাবে জিএমজির আর্থিক অবস্থান বর্তমানে ভালো নয়। ফ্লাইটের আকারও কমে গেছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দুবাই, আবুধাবি, রিয়াদ ও জেদ্দা রুটের ফ্লাইট।

জৈন্তাপুরে ফের উত্তেজনা ডিবির হাওরে মাছ ধরতে বিএসএফের বাধা

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি

সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে বিজিবি বিএসএফ’র মধ্যে আবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বংলাদেশী মত্স্যজীবীরা ডিবির হাওরে মাছ ধরতে গেলে বিএসএফ বাধা দেয়ায় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। দু’পক্ষের পতাকা বৈঠক হলে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়।
জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে নানামুখী বিরোধ ও সংর্ঘষ চলে আসছিল। ভারতীয়রা বাংলাদেশী সীমান্ত এলাকায় জোর করে ভূমি দখল, পাকা ধান কেটে নেয়া, বিলের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া, কৃষকের হালের গরু ধরে নিয়ে যাওয়া, কৃষক ও শ্রমিকদের ধরে নিয়ে হত্যা ও নির্যাতন করা, সবজিক্ষেত পুড়িয়ে ফেলাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল ভারতীয় বিএসএফ ও খাসিয়ারা। এসব বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় একাধিকবার উভয়দেশের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে বাংলাদেশের শতাধিক লোক আহত হন। গত দুই বছরে শ্রমিক, কৃষকসহ প্রায় ৭ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় দলমত নির্বিশেষে সীমান্ত রক্ষার দাবিতে ও ভারতীয়দের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে সীমান্তবাসী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করতে থাকে। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৫ অক্টোবর জাফলংয়ে এক সভায় বলেন, ডিবির হাওর সীমান্ত ভূমি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এক ইঞ্চিও ভারতকে দেবে না। যারা বলছে সীমান্তের ভূমি ভারত নিয়ে গেছে আসলে তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, ডিবির হাওরের ভূমি আমি জৈন্তাবাসীকে উপহার দিয়ে গেলাম। এ ঘোষণায় ডিবির হাওর সীমান্ত এলাকার মত্স্যজীবীরা আনন্দে উত্ফুল্ল হয়ে ২৪ ডিসেম্বর ১২৮৪নং পিলারের ৪শ’ গজ ভেতরে মাছ ধরতে গেলে বিএসএফ দলবল নিয়ে বাংলাদেশী মত্স্যজীবীদের তাড়িয়ে দেয়। সংবাদ শুনে ডিবির হাওর সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে বিজিবি বিএসএফ’র মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল ১২৮৫নং পিলারের বিজিবি বিএসএফ’র মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডিবির হাওর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার নজরুল ইসলাম, হাবিলদার আমানউল্লাহ। বিএসএফ’র পক্ষে মুক্তাপুর ক্যাম্প কমান্ডার রাম কিশান, হাবিলদার অতুল বর্মণসহ উভয়দেশের ১৫-২০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলাকালে উভয়দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল।
বৈঠক শেষে বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নজরুল ইসলাম বৈঠক সফল হয়েছে বলেন। তবে তিনি বলেন, ভারতীয়রা ডিবির হাওর ক্যাম্পের সীমানা পর্যন্ত দাবি করে। তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বিরোধপূর্ণ বিলের ভূমি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে সমাধানের কথা বলেন। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উভয়দেশের লোকজনকে বিলে মাছ ধরতে নিষেধ করেছেন।
এ বিষয়ে ডিবির হাওর এলাকার সুলেমান মিয়া, আবদুল মালেক, ইসমাইল মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন সীমান্তে কোনো সমস্যা নেই। সুরঞ্জিত বাবু জাফলংয়ের সভায় ডিবির হাওরের বিল জৈন্তাবাসীকে উপহার দিয়ে গেছেন। তার উপহার পেয়ে আমরা খুশি হয়ে বিলে মাছ ধরতে যাই। কিন্তু বিএসএফ আমাদের বাধা দেয়। এ উপহার দিয়ে আমাদের কী লাভ হলো। বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে উভয়দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/27/124199

Monday 19 December 2011

বিএসএফের গুলিতে ৪ বাংলাদেশি নিহত

অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ১৭-১২-২০১১
কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আজ শনিবার ও গতকাল শুক্রবার চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম: জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়ক মণ্ডল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আজ শনিবার ভোরে আলমগীর ইসলাম (২৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বর হোসেন মুসা জানান, আলমগীর কৃষ্ণানন্দ বকশী গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিন সহযোগীসহ গরু নিয়ে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
শিমুলবাড়ী বিজিবি বিওপির কমান্ডার সুবেদার নিজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরপুর: জেলার মেহেরপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গতকাল শুক্রবার রাতে নাহারুল হোসেন (৩৫) নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাওড়াতলা গ্রামে।
নিহতের বাবা বিশারদ হোসেন জানান, গতকাল রাত আটটার দিকে নাহারুল সেচকাজ করতে জমিতে যান। এর কিছুক্ষণ পরই সীমান্তে গুলির শব্দ শুনে তিনি সেখানে যান। কিন্তু ততক্ষণে বিএসএফ লাশ ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যায়।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিএসএফের গুলিতে একজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির ৩২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও মিরপুর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল হামিদুন নবী চৌধুরী বলেন, শাওড়াতলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশি মারা গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিএসএফ কেন এ ঘটনা ঘটাল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা শুনে বিজিবি লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বিএসএফ দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছে বিকেলে চিঠি দিয়ে জানানো হবে কখন তাঁদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
নিহত দুজন হলেন, কাটলা সীমান্তের দাউদপুর গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান (২০) এবং রণগ্রামের মো. তাইজুল ইসলাম (২৬)।
আজ শনিবার দুপুরে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পরে বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের আগ্রা ক্যাম্পের কমান্ডার রাকেশ কুমার বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এরপরে বিএসএফ তাঁদেরকে লক্ষ্য করে চারটি গুলি ছোড়ে। এতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভাইগড় ক্যাম্পের কমান্ডার আবদুল কাদের বীর বলেন, এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-12-18

Wednesday 23 November 2011

বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : দৌলতপুরে কৃষককে অপহরণ

ডেস্ক রিপোর্ট

যশোরের বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে এক কৃষককে। বিস্তারিত আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
বেনাপোলে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা : বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে বাতেন আহম্মেদ নামে বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
পুটখালি বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে বাংলাদেশী একদল ব্যবসায়ী ভারত থেকে গরু কিনে দেশে ফিরছিলেন। এ সময় ভারতের আংরাইল সীমান্তের বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা এ সময় পালিয়ে গেলেও বাতেনকে ধরে বিএসএফ সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তারা তার লাশ নিয়ে যায়। নিহত বাতেন যশোরের শেখহাটি এলাকার খায়রুল বাসারের পুত্র। এ ঘটনায় উভয় সীমান্তে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দৌলতপুর সীমান্তে কৃষক অপহরণ : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে এক বাংলাদেশী কৃষককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বিজিবি সদস্যরা ওই কৃষককে ফেরত পেতে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিজিবি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের দেরেশ মণ্ডলের ছেলে খবির উদ্দিন (৩১) বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ঘাস কাটতে ছিল। এ সময় ভারতের মধুগাড়ি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ফেরত পেতে বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
এ ব্যাপারে বকমারী ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আ. মালেক জানান, দু’দেশের অমীমাংসিত জমিতে ওই কৃষক ঘাস কাটছিলেন। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সমঝোতা হবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার ছাড়া হত্যার দায়মুক্তিকে উত্সাহী করবে : বিএসএফের হত্যায় বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে


স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, আহত করা ও অপহরণ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নিষ্ক্রিয়তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। গতকাল অধিকার অক্টোবর মাসের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে সীমান্ত হত্যা ও অপহরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫ নাগরিক, ৮ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনির শিকার হয়ে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বিএসএফ আরও ৩ বাংলাদেশীকে আহত করেছে এবং ৬ বাংলাদেশীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অক্টোবর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই হচ্ছে কন্যাশিশু। বাকি ১২ জন হলেন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। ৩৫ কন্যাশিশুর মধ্যে আবার ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ধর্ষণের কারণে আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
যদিও ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী তোলপাড় করেছিল। এখন প্রতিনিয়ত ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব।
অধিকারের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে সাতক্ষীরায় তাদের একজন নারী মানবাধিকার কর্মী বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে পেট্রোবাংলাকে বিশিষ্ট ৩ নাগরিকের চিঠির জবাব ২৯ দিনেও পাওয়া যায়নি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ৩ নাগরিক এ চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির জবাব না দেয়ায় অধিকার মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক, দুইজন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলাম। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়’ বক্তব্যটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তিকেই উত্সাহিত করছে বলে অধিকার মনে করে। বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় নিন্দা জ্ঞাপন করছে। অধিকার মনে করে, বিএসএফের এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব এবং বিজিবির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়েও অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।