Wednesday 29 December 2010

আসামে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি

শফিকুল ইসলাম, কলকাতা

টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করে আসামের শিলচরে আগামী মঙ্গলবার এক বিশাল মিছিল করার কর্মসূচি নিয়েছে কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সংক্ষেপে কোপ। প্রস্তাবিত এই বৃহত্ নদীবাঁধ বিরোধী মিছিলে এ অঞ্চলের প্রতিটি দল, সংগঠনসহ ব্যক্তি বিশেষকেও অংশ নিতে কোপ এক বিবৃতিতে আবেদন জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিপাইমুখ নদী বাঁধের বিরুদ্ধে এই মিছিল-সমাবেশ সম্পর্কে জনসাধারণের কাছ থেকে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
টিপাইমুখে প্রস্তাবিত এই বাঁধের বিপদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোপ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রস্তাবিত বাঁধের বহুবিধ ক্ষতির কথা ভেবে একদিকে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মীরা যেমন প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, তেমনি এই অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশেল জনতা, সংস্থা, সংগঠনও প্রতিবাদ-আন্দোলন করছে। এই বাঁধসহ বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে এই ভূখণ্ডসহ অন্য এলাকায়ও আন্দোলনের সমুদ্রকল্লোল ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে। মানবসভ্যতার পক্ষে সর্বনাশী বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের আন্দোলন আর চিন্তা-ভাবনা থেকে আমরা নিজেদের বিছিন্ন রাখতে পারি না। আমরাও তাদের চিন্তার সহযাত্রী ও আন্দোলনের অংশীদার।’
কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রন-মেন্ট আরও বলেছে, টিপাইমুখের জলবোমাতুল্য বিশাল এই ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১৮১ মিটার উচ্চতার প্রস্তাবিত বরাক বাঁধ ভাটি বরাকের শিয়রে আক্ষরিক অর্থেই সর্বক্ষণের সমন। অতি স্পর্শকাতর ভূমিকম্প অঞ্চল পাঁচের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মাটি ভরাট পদ্ধতির এই প্রায় ষাটতলা উঁচু বাঁধ কোনো কারণে ভেঙে গেলে বরাক-সুরমার অস্তিত্ব চিল-কাকেরাও খুঁজে পাবে না। সুরমা-বরাকের ইতািস-ঐতিহ্য সব বিলীন হয়ে যাবে। ধুয়েমুছে বিশাল এই জনপদ এক কবরস্থান বা শ্মশানভূমিতে পরিণত হবে। বাঁধের উজান এলাকায় আবহামনকাল ধরে বসবাস করে আসা মার-মনিপুরী-নাগা-কুকি ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মানুষদের ছিন্নমূল হতে হবে। ইন্দো-বার্মা, ইন্দো-মালয় আর ইন্দো-চীন জীববৈচিত্র্য মানচিত্রের এই অঞ্চলে বিদ্যমান বিরল আর বিলুপ্তপ্রায় বহু জীববৈচিত্র্য বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে শত শত গাছ-গাছড়া আর জানা-অজানা পাখি-প্রাণীর কলকাকলি। বর্ষা বৃষ্টিতে বন্যার তোড় বাড়বে আবার শীতে থাকবে না পানি। মূল নদীর বুক শুকিয়ে যাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকার ছোট-বড় সব নদী-নালা, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় পানি থাকবে না। পানির মাত্রা কমে যাওয়ায় বরাক নদী থেকে বহু প্রজাতির মাছ নিশ্চিহ্ন হবে।
টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী সংস্থার দাবি, এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি যাদের বিপন্ন হতে হবে, সেই বরাক উপত্যকার আমজনতা কোনোভাবেই চুপ থাকবে না। সংগঠিত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করবেই তারা।

No comments:

Post a Comment