Tuesday 31 May 2011

ফারাক্কার মারাত্মক প্রভাব : ৫৩ নৌরুট বন্ধের উপক্রম













ইলিয়াস খান
ফারাক্কার ভয়াবহ প্রভাব এবার দেশের নদ-নদীর ওপর পড়তে শুরু করেছে। একের পর এক নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চলাচলের মূল মাধ্যম নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) এ পর্যন্ত দেশের ৫৩টি নৌরুটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দ্রুত এসব নৌরুটে ড্রেজিং কাজ শুরু করা না হলে নৌ-যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব রুট সচল রাখতে এরই মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে একনেকে। এ বিষয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, প্রাথমিকভাবে ৫৩টি নৌরুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য ১১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে আমরা একনেকে পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি পাস হলে নৌরুটগুলোকে সাবেক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ প্রকল্পটির আওতায় ৩টি ড্রেজার ২০১১ সালের এপ্রিল-মের মধ্যে পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য সহায়ক জলযান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র সংরক্ষণ, খনন কর্মসূচির আওতায় নৌ-চলাচলে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ও নৌরুটগুলোর নাব্য অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর নাব্য উন্নয়ন কল্পে ৫৩টি নৌপথে ৯ বছর মেয়াদি ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীভুক্ত মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ নৌপথের নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-নৌপথে ড্রেজিং শীর্ষক একটি প্রকল্প ২৫ জানুয়ারি একনেক অনুমোদন দিয়েছে এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় ২৪ নৌপথ) শীর্ষক একটি প্রকল্প ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে ড্রেজিং শীর্ষক অপর একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় ২৪ নৌপথ) প্রকল্পের ডিপিপির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১০ সালের ২২ আগস্ট পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেজিং দরপত্র পুনর্নির্ধারণ পূর্বক ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠন শেষে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের ওপর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে ৩ মার্চ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় যা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীনের নিমিত্তে ৩ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যে ২৪টি রুট ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-রুট, চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল রুট, গাশিয়াখালী-বরিশাল- কালিগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা নৌরুট, ভৈরব বাজার-লিপসা-চটক-সিলেট নৌরুট, গাজলাজর-মোহনগঞ্জ রুট, লোয়ারগা- দুলোভপুর রুট, চিটরি-নবীনগর-কুটিবাজার নৌরুট, নরসিংদী-কাটিয়াদী নৌরুট, নরসিংদী-মরিচাকান্দি-সেলিমগঞ্জ-বাঞ্জারামপুর-হোমনা নৌরুট, দাউদকান্দি- হোমনা-রামকৃষ্ণপুর রুট, চাঁদপুর-ইচুলি-ফরিদগঞ্জ রুট, বরিশাল-ঝালকাঠি-পাথরঘাটা নৌরুট, খুলনা-গাজিরহাট- মানিকদা রুট, নন্দীবাজার-মাদারীপুর নৌরুট, দিলালপুর-গৌরাদিঘার-চামড়াঘাট-নীলকিয়াটপাড়া-নেত্রকোনা রুট, মনুমুখ-মৌলভীবাজার নৌরুট, মিরপুর-সাভার নৌরুট, শ্রীপুর-ভোলা খেয়াঘাট-গঙ্গাপুর-ভোলা নৌরুট, চৌকিঘাটা- কালীগঞ্জ রুট, পটুয়াখালী-মীর্জাগঞ্জ রুট, হোসনাবাদ-টরকী-ফাঁসিতলা নৌরুট এবং দালারচর-বালিয়াকান্দি-বোয়ালমারী- কাশিয়ানি নৌরুট। অপর যে ১২টি নৌপথ ড্রেজিংয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো— ঢাকা-তালতলা-ডহুরী, জারিরা-মাদারীপুর-কবিরাজপুর-চৌধুরীর হাট-পিজাখালি-চরজানাজাত-কেওড়াকান্দি নৌরুট, লাহার হাট-ভেদুরিয়া নৌরুট, শাহেবের হাট-টুঙ্গিবাড়ী-লাহার হাট রুট, ঢাকা সদর ঘাট-ভিরুলিয়া-পাটুরিয়া-বাগাবাড়ী রুট, ডেমরা-ঘোড়াশাল-পলাশ রুট, ঢাকা-রামচর-মাদারীপুর নৌরুট, ঢাকা-শরিয়তপুর নৌরুট, চাঁদপুর-নন্দীরবাজার-শিকারপুর- হুলারহাট রুট, হুলারহাট-চরচাপালি-গোপালগঞ্জ রুট, নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি রুট এবং ঢাকা-সুরেশ্বর- আঙ্গারিয়া-মাদারীপুর-নৌরুট। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আশ্বাসের বাণী বহু শুনেছি এখন চাই বাস্তবায়ন। ৩টি নতুন ড্রেজার আনা হবে এমনটা শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এখনও নৌপথে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অল্প খরচে তারা ঢাকা-বরিশাল রুটে যাতায়াত করেন। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। বরিশালে গত ৩০ বছরে ২৭টি নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার অনতিবিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না করলে সব নৌরুট যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে যে ড্রেজারগুলো আছে তার বেশিরভাগ যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ কার্গো মালিক সমিতি অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক মো. ইউনুচ বলেন, ভাষানচর- গাশিয়াখালি-সন্ন্যাসী-চরমোনাইসহ বিভিন্ন রুটে প্রায়ই আটকা পড়ে জাহাজগুলো। পর্যাপ্ত ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকায় চর পরে ভরে যাচ্ছে বেশিরভাগ নৌরুট। সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে লঞ্চ ও কার্গো মালিকরা

No comments:

Post a Comment