Friday 5 August 2011

সৌদি আরব থেকে ফেরত আসছে ১০ লাখ বাংলাদেশী : বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ভারতের

সৈয়দ মিজানুর রহমান সৌদি আরব থেকে
আকামা (ওয়ার্কপারমিট) পরিবর্তন জটিলতার কারণে সৌদি আরব থেকে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ হয়ে যাওয়ায় এসব বাংলাদেশীর জেল-জরিমানা ও পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়েছে।
সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্ধেক প্রবাসী বাংলাদেশীই এখন অবৈধ। কারণ গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের ওয়ার্কপারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেড় বছর আগে সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি সৌদি আরব সফর করে এ বিষয়ে তেমন কোনো উলেল্গখযোগ্য সাড়া পাননি বলে জানা গেছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে যান বলেও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রুমি সাঈদ জানান।
জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় সৌদি আরবের ছোট-বড় বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশীরা বেকার হয়ে পড়ে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠে এবং বহু নতুন কোম্পানি চালু হয়। বেকার এসব বাংলাদেশী ওইসব কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয় আকামা পরিবর্তন নিয়ে।
সৌদি সরকার গত সাড়ে চার বছর ধরে বাংলাদেশীদের আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন পুরোপুরি বন্ধ রাখায় নতুন নিয়োগকর্তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব বাংলাদেশীকে বৈধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু সৌদি স্পন্সর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বহু বাংলাদেশী প্রবাসীকে সৌদি আরবে আকামা দেয়। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাগজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নবায়ন বন্ধ করে দেয়। যার ফলে তাদের অধীনে আসা বাংলাদেশীরা পড়ে বিপাকে।
কথা হয় আভায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক হাসান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু তার আকামা পরিবর্তন হয়নি। কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন। কিন্তু আকামা না হওয়ায় তার দেশে ফেরা বা এখানে থাকা দুটিই অনিশ্চিত। যে কোনো মুহূর্তে সৌদি পুলিশ অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
রিয়াদের একটি শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী নাগরিক কবির হোসেন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবের বিভিন্ন কেম্প্পানিতে নিয়োজিত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী এখন অবৈধ। আকামা বদল না হওয়ায় এদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে। অথচ এদের অনেকেরই এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে আসার খরচই ওঠেনি। এদের অধিকাংশই গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাগ্য বদলের আশায় এখানে এসেছিলেন।
মদিনায় গত এক বছর ধরে অবৈধভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ মদিনা শাখার সভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা আমাদের এ চরম ভোগান্তির কারণ। তিনি জানান, তার মতো আরও লাখ লাখ বাংলাদেশী চরম অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যে এখানে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদেশিদের জন্য সৌদি আরবে আকামার মেয়াদ থাকে ৩ থেকে ৫ বছর। এর মধ্যেই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অন্য সব দেশের জন্যই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের দরজা খোলা রয়েছে। ওইসব দেশের নাগরিকদের কোনো ভোগান্তিও নেই। কিন্তু ২০০৭ সালে হঠাত্ করেই বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর আশ্বাস পাওয়া গেছে চালুর। কিন্তু চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে তা আর হচ্ছে না।
বর্তমানে জেদ্দায় অবস্থানরত গেল্গাবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম অভিযোগ করেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশের ভাব-মর্যাদা উন্নয়নে কোনো রকম উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার। তিনি আরও জানান, সৌদি আরবে ভারতের একটি নিজস্ব পত্রিকা রয়েছে। তাছাড়া ভারতের প্রায় সবক’টি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সৌদি আরবের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অতি সহজেই ভারত তাদের নিজেদের ইমেজ তৈরি এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার দখল করা। আর এতে বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয় শ্রমিকরা।

No comments:

Post a Comment