Sunday 27 March 2011

দৌলতপুর সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন তিনশ’ একর জমি দখলের পাঁয়তারা

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয়দের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে। সীমান্তের পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চরের প্রায় ৩শ’ একর জমি ভারতীয়রা দখলে নেয়ার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। পদ্মায় ভেঙে যাওয়ার আগে সেখানে বাংলাদেশীদের জনবসতি থাকলেও এখন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের বাধার মুখে বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটায় ফিরতে পারছে না সেখানকার কয়েক হাজার মানুষ। আর এসব জমি যদি ভারতের দখলে চলে যায় তাহলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে সীমান্তবর্তী ৫টি গ্রাম। বাংলাদেশী ভূমি জরিপ বিভাগ একাধিকবার ভারতীয় ভূমি জরিপ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করতে না পারায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
পদ্মা নদীর জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চর এখন সবুজ ফসলে ভরে উঠলেও ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এ চরে ছিল দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মহম্মদপুর, চাইডোবা, ডাঙেরপাড়া, ইনছাফনগর ও পূর্ব খারিজাথাক নামের ৫টি গ্রাম। পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত কয়েক বছরের মধ্যে এ গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যায় নদী গর্ভে। তবে ৪-৫ বছর আগে বিলীন হওয়া ওই গ্রামগুলোর বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে ওঠে। পরে পলি পড়ে সেসব জমি আবাদযোগ্য হয়ে উঠলেও বাংলাদেশীরা সেখানে চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে তারা ওই জমিতে যেতে পারছে না। জমিতে গেলেই বিএসএফ তাদের তাড়া করছে। বিএসএফ বলছে, এ জমি ভারতীয়দের। আবার কোনো কোনো কৃষক এসব জমিতে ফসল আবাদের সুযোগ পেলেও এর জন্য বিএসএফকে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী সীমান্ত এলাকাবাসীর মুখে মুখে। ইনছাফনগর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, তার ১৫বিঘা জমি এখন বিএসএফের দখলে চলে গেছে। জমিতে গেলে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার বাউশমারী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। বন্দুক তাক করে ভয় দেখায়। একই অভিযোগ মহম্মদপুর গ্রামের কৃষক মুকুল বিশ্বাসেরও। নিজ জমিতে যাওয়ার অপরাধে বিএসএফ তাকে একবার ধরেও নিয়ে গেছে। করেছে নির্যাতন।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কুদরত-ই-খুদা জানান, ১৯৪৭ সাল থেকে চরের ওইসব জমিতে ফসল উত্পাদন করে আসছে গ্রামের কৃষকরা। এখন ভারতীয়রা দাবি করছে ওই জমি তাদের। নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কখনও কখনও তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কৃষিকাজের উপকরণ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর কোনো নিরীহ কৃষক ওই এলাকায় থাকলে তাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে বিএসএফ। সীমান্তবাসীর বর্তমান অবস্থা যেন নিজ ভূমিতে পরবাসীর মতো। চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কুদরত-ই-খুদা সরকারের কাছে ভারতীয়দের কবল থেকে চরের ৫ গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের ভিটেমাটি উদ্ধারের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরের (৩২ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়ন) উপ-অধিনায়ক মেজর জাহিদুল ইসলাম বিএসএফের জমি দখলের বিষয়ে কথা বলতে সম্মত না হলেও ভূমি জরিপের কাজে জড়িত কর্মকর্তারা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলছেন, দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ছাড়া এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এদিকে ভুক্তভোগী সীমান্ত এলাকাবাসীদের দাবি বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের ৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের ভিটেবাড়ি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

No comments:

Post a Comment