Saturday 24 April 2010

সুপ্রিমকোর্টে সেদিন যা ঘটেছিল



স্টাফ রিপোর্টার
সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুর ও তাণ্ডবের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ওই তাণ্ডবে অংশগ্রহণকারী একজনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সম্প্রতি সরকার সমর্থক সিনিয়র আইনজীবীরা ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের সেই ঘটনাকে বিকৃতভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। ২০০৬ সালে ওই ঘটনার প্রতিবাদে খোদ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা টানা ৩ দিন এজলাসে বসা থেকে বিরত ছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দৈনিক আমার দেশ সেদিনের ঘটনা আবারও উপস্থাপন করছে।
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের চেম্বারে ব্যাপক ভাংচুর এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর। পরের দিন সব জাতীয় দৈনিকে এ ঘটনার সংবাদ শীর্ষ শিরোনাম হিসেবে প্রকাশিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে শুনানির জন্য তত্কালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি শুনানি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলে এ ঘটনা ঘটানো হয়। প্রধান বিচারপতির এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির এজলাসের ভেতর ও বাইরে সহিংসতা ছড়ায়। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে লাঠি হাতে অনেক বহিরাগত যুবককে আদালত প্রাঙ্গণে ভাংচুরে অংশ নিতে দেখা গেছে সেদিন। দেড়ঘণ্টা ফ্রিস্টাইল ভাংচুর এবং একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর পুলিশ আসে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি স্থগিত করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলাটির শুনানি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার পরপরই আদালত কক্ষে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থক আইনজীবীরা। ওই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনসহ অন্যদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা স্লোগান দিতে দিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসের দিকে যান।



এর আগে রোকনউদ্দিন মাহমুদ চিত্কার করে বলেন, প্রধান বিচারপতির এ বিষয়ে কোনো এখতিয়ার নেই। প্রধান বিচারপতি কোনো মামলার শুনানি কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিতে পারেন না। একই কথা চিত্কার করে বলেন ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম। এ সময় আদালতে উপস্থিত ১৪ দলের আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করেন এবং অনেকে লাফিয়ে টেবিলের ওপরে ওঠেন। তারা আদালতে উপস্থিত সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন এবং তাদের প্রতি তেড়ে যান। এতে আদালতে উপস্থিত চারদলীয় জোটের সমর্থক আইনজীবীরাও প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় হৈচৈ। তখনও বিচারপতিরা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতিদের এজলাসে বসে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী লাফিয়ে টেবিলে ওঠেন এবং চিত্কার করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আক্রমণের জন্য এগিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা এনেক্স ভবনের এই আদালত থেকে প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দিকে দৌড়ে যান। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির তখন উপস্থিত ছিলেন না। তারা প্রধান বিচারপতিকে না পেয়ে তার চেম্বার ও প্রধান বিচারপতির আদালতে ভাংচুর চালান। এ সময় বেশ কিছু দরজা-জানালা ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করা হয়। ছুড়ে মারা হয় প্রচুর আইনের বই। অনেক বই ওইদিন বিকালেও এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওপরে ছুড়ে মারা একটি চেয়ার ভেঙে ভবনের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন আইনের বই তারা তছনছ করেন তারা। প্রধান বিচারপতির চেম্বারের সামনে রাখা ফুলের টবগুলো একে একে দোতলা থেকে ছুড়ে মারা হয় নিচে। তারা প্রধান বিচারপতির চেম্বারের সামনে ওড়ানো জাতীয় পতাকা টেনে নিচে নামান। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগদানকারী বহিরাগতরা পুরো সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণজুড়ে তাণ্ডব চালায়। ওই ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়নি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরও।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29079

No comments:

Post a Comment